‘একাত্তরের জেনোসাইডের জাতিসংঘের স্বীকৃতি বেশি দূরে নয়’

| সোমবার , ২২ মে, ২০২৩ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানিদের বর্বরতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না বলে মনে করছেন ডাচ রাজনীতিক হ্যারি ফন বোমেল। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের বিরোধিতা করায় একাত্তরে জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেতে দেরি হচ্ছে। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। খুব শিগগিরই জাতিসংঘ থেকেও এ স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হবে।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ‘বাংলাদেশে জেনোসাইডের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।

নেদারল্যান্ডসের সাবেক এমপি বোমেল বলেন, ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য গণহত্যার স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ১৯৭১ সালে গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার, সাক্ষী, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া বিভিন্ন গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করব। এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে আমরা এই গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করব, প্রচারও চালাব। এছাড়া গণহত্যার সাক্ষীদের ডাচ পার্লামেন্টে নিয়ে গিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরব।

আমস্টারডাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. অ্যান্থনি হোলস্ল্যাগ বলেন, এই জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আর ঠিক সেই কারণে এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনা প্রয়োজন।

সুইস ইন্টারস্ট্র্যাটেজি গ্রুপের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, ১৯৭১ সালে এদেশে কী হয়েছিল সেটা জেনে বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরা। একইসঙ্গে এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলকে অবহিত করা।

বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।

নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মাবোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। তখন থেকেই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

একাত্তরে বাংলাদেশিদের ওপরে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ইতিমধ্যে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ এবং গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স (আইএজিএস)

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম পলিথিনমুক্ত করতে অভিযানে নামছে জেলা প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর সমাধিতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা