উপলব্ধিতে বেড়ে উঠছে সেই শিশু

ইমাম ইমু | রবিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের প্রথম দিন সকাল আটটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ মাঠের পাশে ফুটপাতেই ছেলে সন্তান প্রসব করেন সাবেকুন্নাহার। একদিকে বেকার স্বামী অন্যদিকে বাড়ি ছাড়া সাবেকুন্নাহার নবজাতক সন্তান নিয়ে তীব্র শীতে ফুটপাতেই অবস্থান করছিলেন। সাথে ছিল তার ছোটভাই রমিজ। তীব্র শীতে সন্তানকে ভালো রাখতে রীতিমতো ছটফট করছিলেন সাবেকুন্নাহার। এ নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে তাদের সেই কষ্টের রাতযাপন নিয়ে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এটি নজরে আসে চট্টগ্রামের সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের নিবাস সেবামূলক প্রতিষ্ঠান উপলব্ধির। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সহায়তায় নবজাতক শিশুসহ তাদের উপলব্ধির প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে প্রসূতি সাবেকুন্নাহার, নবজাতক, তার ভাই রমিজ ও তার স্বামী কাইসার সেখানেই অবস্থান করছেন।

সাবেকুন্নাহার জানান, পাঁচ বছর আগে প্রেম করে একই উপজেলা চকরিয়ার কাইসারের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর কিছুদিন শ্বশুরবাড়িতে, এরপর কিছুদিন নিজ বাড়িতে, এরপর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সাবেকুন্নাহারকে। বাড়ি ছাড়া হয়ে পাড়ি জমান চট্টগ্রাম শহরে। সেই থেকে স্বামীর সাথেই চট্টগ্রাম নগরীতে তার ভাসমান জীবন। স্বামী কাইসার কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনো লেবারের কাজ করে তাদের ভাসমান সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু বাথরুমে পড়ে পায়ের রগ ছিঁড়ে ফেলায় কাইসার এখন কাজ করতে অক্ষম। তাই তাদের সংসারে নেমে আসে সাত রাজ্যের কষ্ট। কখনো ফুটপাতে, কখনো মাজারে দিনরাত কেটেছে তাদের। ২০২১ সালে একটি সন্তান হয়েছিল তাদের, কিন্তু ঠাণ্ডাজনিত কারণে বাচ্চাটি মারা যায়। এবারও তীব্র শীতের মাঝে খোলা আকাশের নিচে জন্ম নেওয়া সন্তানটিকে নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তিনি।

সন্তান প্রসবের দিন আইডিয়াল স্কুলের একজন স্কুল শিক্ষিকার সহায়তায় বাচ্চার প্রয়োজনীয় কাঁথা এবং মশারি পেলেও মেলেনি মাথা গোঁজার ঠাঁই। অবশেষে ঠাঁই হয়েছে উপলব্ধির ছায়াবিথিতে। সেখানে স্বামী, সন্তান নিয়ে থাকছেন সাবেকুন্নাহার। থাকা, খাওয়া, দিনে দুইবার নিয়ম করে মেডিকেল নার্স দিয়ে চেক আপ করে যাচ্ছেন উপলব্ধির কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর পশ্চিম খুলশীর আবাসিক এলাকায় অবস্থিত উপলব্ধির প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নবজাতক মো. হোসেনকে দেখভাল করছেন নার্স প্রিয়া ভট্টাচার্য। প্রিয়া ভট্টাচার্য জানান, শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে। একজন শিশুর যাবতীয় টিকা বা ওষুুধপত্র লাগলে ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাবেকুন্নাহারের স্বামী কাইসার বলেন, এখানে বাড়ির চেয়ে অনেক ভালো আছি। যাবতীয় থাকাখাওয়া সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুর কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। সময় মতো সবকিছু পৌঁছে যায় আমাদের কাছে। তাদের দেখভাল করছেন উপলব্ধির জাহানারা আক্তার। তিনি বলেন, এখানে যত বাচ্চা আসে সবাইকে আমি আমার সন্তানের মতো দেখি। উনারা এসেছেন কয়েকদিন হচ্ছে। আমরা সবকিছু দেখভাল করার চেষ্টা করছি। সাবেকুন্নাহার দম্পতি দৈনিক আজাদী এবং উপলব্ধির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইপিজেডে দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আহত ২০
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে যুবক আহত