উচ্ছেদ অভিযানে হামলা, ইউএনও ওসিসহ আহত ১০, আটক ৩

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে ফের অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযানে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ১০ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের শেষ দিকে বিকাল সাড়ে ৩ টায় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনও, ওসিসহ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় অবৈধ দখলদাররা। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদসহ ১০জন আহত হয়েছেন। এসময় অবৈধ দখলদারদের ঠেকাতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। উভয় পক্ষে প্রায় এক ঘণ্টা হামলা পাল্টা হামলার পর অবৈধ দখলদাররা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে তিন হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুএম মারমা, মো. রাজীব হোসেন, এস.এম.এন জামিউল হিকমা, রাকিবুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে. এম রফিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন, সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ। এছাড়াও জেলা পুলিশ ফোর্সের ২ শতাধিক সদস্য অভিযানে অংশ নেন।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, জঙ্গল সলিমপুরে যেখানে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি একেবারে দুর্গম পাহাড় ঘেরা। নেই গাড়ি চলাচলের কোনো ব্যবস্থা। তারপরও সব ধরনের নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করে তারা অভিযান চালাচ্ছিলেন। কিন্তু অভিযানের প্রায় শেষ পর্যায়ে অবৈধ দখলদাররা তিন থেকে চার শতাধিকের অধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের চারপাশে ঘেরাও করে এবং ইট, পাটকেল ছুঁড়ে মারে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম ও তিনি আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁরাও বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ হামলা পাল্টা হামলার পর হামলাকারীরা পালিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ওসি তোফায়েল আহমেদ আরো জানান, হামলা পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবা নিতে তিনি ভাটিয়ারী বিএসবিএ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া হামলায় আহত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে তিন হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকার ছিন্নমূল বড়ইতলা ২নং সমাজ এলাকায় অবস্থিত সলিমপুর মৌজার বি.এস ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত বি.এস ৩৬০ ও ৩৬১ দাগের জায়গাটি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে দখল করে সেখানে শতাধিক বসতি স্থাপন করে দখলদাররা। আমরা দখলদারদের সরে যেতে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা সরেনি। এখন আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। দিনব্যাপী অভিযানে উদ্ধার হওয়া জায়গাটি কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। অভিযানের শেষ পর্যায়ে অবৈধ দখলদারদের অতর্কিত হামলায় ইউএনওওসিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানান তিনি।

এদিকে অভিযানের বিষয়ে সন্ধ্যায় নগরীর সার্কিট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আলনাসীফ বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকা সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এ এলাকায় যারা বসবাস করেন তারা সকলে অবৈধ। তাদের উচ্ছেদ করে পুরো এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ১২০ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১০ একর জায়গা।

অভিযানের একপর্যায়ে টিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অভিযান শেষে টিমের সদস্যরা বের হয়ে আসবেন; ঠিক ওই সময় পেছন থেকে ঢিল ছুঁড়ে মারা হয়েছে। এতে টিমের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আশ্রয়ে আনা হবে। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আলনাসীফ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধআদিলুরসহ দুইজনের কারাদণ্ডের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ