উচ্ছেদের এক বছর পূর্ণ না হতেই নগরীর কোর্ট হিলের দুই প্রবেশ পথের মুখে ফের বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় যানজটসহ নানা কারণ দেখিয়ে হোটেল ব্রীজ ও হোটেল জামানসহ ১৭টির বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে দখলমুক্ত জায়গায় ওয়াশ ব্লক গড়ে তোলা হবে। করা হবে সাধারণের বসার ব্যবস্থা। কোর্ট হিলে ওঠানামায় দীর্ঘদিনের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা আর থাকবে না।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উচ্ছেদকৃত জায়গায় যার ইচ্ছা সে ঢুকে পড়ছিল। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। এজন্য তিনজন ব্যক্তির সাথে ভাড়ানামা করা হয়েছে। তারা সেখানে রেস্টুরেস্ট করবে। ইট–পাথরের কোনো স্থাপনা নয়, বরং সেখানে পোর্টেবল স্থাপনা গড়ে উঠবে। যাতে যে কোনো সময় সেগুলো সরিয়ে নেওয়া যায়। ৫ বছরের জন্য এ ভাড়ানামা করা হয়েছে। তবে সরকার যখন চাইবে তখন জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সেখানে টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনো টিনের ঘেরাও রয়েছে। ঘেরাওয়ের মধ্যেই চলছে নতুন স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ। কোর্ট হিলের দুটি প্রবেশ মুখের একটি হচ্ছে জহুর হকার মার্কেটের পাশে। সেখানে ইতোমধ্যে দ্বিতল পোর্টেবল স্থাপনা দাঁড়িয়ে গেছে। কাজ শেষ হয়নি। পুরো কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে। অন্যদিকে কোর্ট হিলের প্রধান ওঠানামার পথ বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে অবস্থিত; সে জায়গায় রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানা গেছে। রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কাজ শুরু না হলেও সেখানে স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের জন্য দুটি পোর্টেবল স্থাপনা নির্মাণের কাজ বেশ কিছুদিন ধরে চলছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ আজাদীকে বলেন, এ জায়গা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেজন্য আমরা তিনজন ব্যক্তির সাথে ৫ বছর মেয়াদি ভাড়ানামা করেছি। তারা সেখানে রেস্টুরেন্ট করবে। আমাদের যখন প্রয়োজন পড়বে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। সেজন্য বলে দেওয়া হয়েছে, ইট–পাথরের স্থাপনা করা যাবে না। পোর্টেবল স্থাপনা হতে হবে। মূলত জায়গার দখল ধরে রাখতে আপাতত উচ্ছেদকৃত জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কোর্ট হিলের দুটি প্রবেশ পথের মধ্যে প্রধান প্রবেশ পথের মুখে টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা জায়গা থেকে ২০ শতক ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে দ্বিতল স্থাপনা হবে। ইউনিট হবে দুটি। স্থাপনার কাজে ১০ শতাংশ ব্যবহার করা হবে। বাকি জায়গা খালি থাকবে। পুরো জায়গায় স্থাপনা করা যাবে না, সেটা যারা ভাড়া নিয়েছেন তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। ওই জায়গার একটি অংশে স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের জন্য দুটি স্থাপনা হচ্ছে। সেগুলোও পোর্টেবল। আরেক প্রবেশ মুখ (জহুর হকারের পাশে) পাশের টিনের ঘেরাও করে রাখা জায়গার পরিমাণ ৪ শতক। সেখানে দ্বিতল একটি স্থাপনা হবে। ইউনিট হচ্ছে একটি। কোর্ট হিলের এ দুটি প্রবেশ পথে ভবিষ্যতে অন্যকিছু করার প্রয়োজন হলে তা করা যাবে।
কোর্ট হিলে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ প্রায় ৩০টি সরকারি অফিস এবং আদালত রয়েছে। উক্ত আদালত ও অফিসগুলোতে প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী ও বিচারক, আট হাজার আইনজীবী এবং পাঁচ হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবী যাওয়া–আসা করেন। প্রতিদিন যাতায়াত করেন প্রায় ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী ও সেবাপ্রার্থী।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি কোর্ট হিলে প্রবেশ মুখের সরকারি খাস জমি দখল করে ১৯৯০ সালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল ব্রীজ ও হোটেল জামানসহ ১৭টির বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত হওয়া ভূমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৪৩৬ একর।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কোর্ট হিলে ওঠানামার দুটি মুখে জনজট ও যানজট লেগে থাকত। সেজন্য দুটি মুখ থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি, দুই জায়গায় নতুন করে স্থাপনা গড়ে উঠছে। লিজ হোক বা ভাড়া হোক কোনোটাই তো জেলা প্রশাসন পারে না। বলা হয়েছিল, প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। এখন তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? তিনি বলেন, দুটি জায়গা খালি রাখা উচিত। একদম উন্মুক্ত থাকবে। তাহলে চলাচলে সুবিধা হবে।