আম্মান ও দ্বীনের ‘খণ্ডিত সংশ্লিষ্টতা’ পেয়েছে পুলিশ

অবন্তিকার আত্মহত্যা, যেভাবে এগোচ্ছে তদন্ত কমিটি

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১৮ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের ‘খণ্ডিত সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেছেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগগুলোর সত্যতা আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তবে সব অভিযোগ যে একেবারে মিলে গেছে এমন নয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রায়হান ও দ্বীন ইসলামের খণ্ডিত সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে এই সংশ্লিষ্টতার গভীরতা কতখানি, সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলায় শনিবার রাতে আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গে কথা বলেন মহিদ উদ্দিন। আম্মান ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে গতকাল কুমিল্লার কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তরের কথা জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে অবন্তিকা শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের বাগিচাগাঁও পিসি পার্ক স্মরণিকা ভবনে তাদের বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেইসবুক পেইজে দীর্ঘ একটি লেখা পোস্ট করেন অবন্তিকা। সেখানে আত্মহত্যার জন্য দায়ী করে যান তার সহপাঠী আম্মান এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে। তার অভিযোগ, আম্মান তাকে অনলাইন ও অফলাইনে হুমকির উপর রাখতেন এবং সহকারী প্রক্টরকে এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনিও হুমকি ধমকি দিয়েছেন।

নিজেকে লড়াকু মেয়ে বর্ণনা করে এই তরুণী ফেইসবুকে লেখেন, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটাও লিখেছেন তিনি। তাও কেন সে পথে গেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার সহপাঠী ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন দ্বীন।

রাতে আম্মান ও দ্বীনকে আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। সেখানে দুজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। পরে রাতেই আম্মান ও দ্বীনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

যেভাবে এগোচ্ছে তদন্ত কমিটি : অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তের গতি কোন পথে এগোবে তা বুঝতে আরো তিনচারটি বৈঠক করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক এক করে ডেকে কথাও বলবে কমিটি। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।

অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি গতকাল প্রথম সভায় বসে। বিকালে সভা শেষে কথা বলেন কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমরা আজ তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। শুরু থেকেই এই ঘটনায় যারা যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন সবাইকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ডাকার চেষ্টা করব। তদন্ত কমিটির পরবর্তী সভা সোমবার (আজ) সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

প্রথম সভায় আলোচনার বিষয়ে কমিটির সদস্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, আজকে প্রথম সভায় ঘটনা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করছি, সেগুলো দেখছি। আর নিজেদের মধ্যে একটু আলোচনা করলাম। এখনও জানানোর মতো কিছু হয় নাই। আরও তিন চারটা সভার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব যে, তদন্ত কোন দিকে আগাবে।

তদন্ত কমিটির কাজ শুরুর কথা এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য সাদেকা হালিম সাংবাদিকদের জানান। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আশাও প্রকাশ করেন তিনি।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছে। কমিটির বাকি ৩ সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল হোসেন এবং সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ঝুমুর আহমেদ। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজগন্নাথ শিক্ষার্থীদের একগুচ্ছ দাবি, ৭ দিনের আলটিমেটাম
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে রাখতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে : মেয়র