অচেনা আপন জীবন বাস্তবতার গল্প

রীতা দত্ত | শুক্রবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

নাসের রহমান একজন বহুমাত্রিক মানুষ। পেশাগত জীবনে ব্যাংকের দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেছেন। লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ, যা পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। বেতার ও টেলিভিশনের একজন নিয়মিত সংবাদপাঠক তিনি। সংস্কৃতিবান এ মানুষটি ‘চলতি হওয়ার পন্থী’ নন। বলেন কম, পরিমিতিবোধের কারণে অযথা বাক্যালাপ করেন না।

অচেনা আপন’ তাঁর লেখা গল্পের বই। ১৬টি গল্প বিন্যস্ত করেছেন এ গ্রন্থে। বিষয়বৈচিত্র্য, বর্ণনার চমৎকারিত্ব, ছোটখাট বিষয় বা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তাঁর লেখাকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শব্দচয়ন, ভাষাশৈলী, বিষয় নির্বাচন লেখকের দক্ষতার পরিচয় দেয়। জীবনের সকল অভিজ্ঞতা তিনি পরম মমতায় নিজের মতো করে উপস্থাপন করেছেন, প্রকাশ করেছেন অবলীলায়।

এ গ্রন্থে প্রকৃতির বর্ণনা, মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো নারীর মানসিক যাতনা, পরিবারসমাজ থেকে লাঞ্ছনা, অবজ্ঞা, শরণার্থীর মর্মবেদনা, পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে আসা মানুষের মানসিক যন্ত্রণা, অবসরজীবনের নিঃসঙ্গতা, কখনোকখনো পারিবারিক অবহেলা ইত্যাদি বিষয়গুলো তিনি গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।

অচেনা আপন’এর গল্পে তিনি ব্যক্ত করেছেন কীভাবে আপনজন অচেনা হয়ে পড়ে, কিভাবে পারস্পরিক সন্দেহে দীর্ঘ বছরের যাপিত জীবনে বিচ্ছেদের কালো ছায়া পড়ে, সন্তানকে নিয়ে চলে টানাপোড়ন, অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সন্তানের ভবিষ্যত এ বিষয়গুলো তিনি অত্যন্ত মমতায় তুলে ধরেছেন।

অন্যরকম একুশ’ গল্পে আমাদের মহান ভাষাআন্দোলন একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে লিখেছেন। একুশ আজ কেবল আমাদের নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের বিপুল জনগোষ্ঠী আজ আমাদের এ দিনটিকে উদযাপন করে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে। বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরের একজন প্রবীণ চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্মে বাংলা বর্ণমালার ছবি স্থান পেয়েছে, এ বিষয়টি তাঁর কাছে ভিন্নরকমের মনে হয়েছে। চিত্রটির অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা হলো একুশের বিশ্বব্যাপ্ততা।

প্রাণবন্ত এক বিদেশিনী’ গল্পে লেখক বিদেশেও বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির পরিচয় আছে এ কথা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকান্ডের বিষয়টি বিদেশিদের কাছে যে অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং হৃদয়বিদারক তা এড়িয়ে যাননি।

ফলাফল’ গল্পে লেখক বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক অসঙ্গতির বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। ভিন্ন রকমের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শিক্ষার্থীদের যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারছে না, তার বিশদ বর্ণনা আছে। নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যেন আজ গিনিপিগ। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ভালো ফলাফল করার জন্য কোচিংসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। অভিভাবকবৃন্দের চাহিদা হলো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, প্রকৃত জ্ঞান অর্জন নয়। এতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না, হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়গুলো সুখকর নয়। অভিভাবকবৃন্দকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

নাসের রহমানের প্রতিটি লেখায় বাস্তবতা ফুটে উঠেছে যা জীবনের প্রতিচ্ছবি এবং পাঠককে নাড়া দেয়। এখানেই লেখকের সার্থকতা। নাসের রহমানের লেখা ‘অচেনা আপন’ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করবে এ প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিহ্নহীন চিরকাল
পরবর্তী নিবন্ধস্মৃতিতে কবি শামসুর রাহমান