১১ সেপ্টেম্বর চালু হচ্ছে সর্বাধুনিক ক্যাথ ল্যাব

চব্বিশ ঘণ্টা মিলবে হৃদযন্ত্রের চিকিৎসা সেবা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের টাকায় গড়ে উঠা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সর্বাধুনিক ক্যাথ ল্যাব চালু করা হচ্ছে। ছয় কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা এই ক্যাথ ল্যাবে রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা হৃদযন্ত্রের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাথ ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ কোন ক্যাথ ল্যাব ছিল না। হাসপাতালের অন্যতম সুহৃদ, চট্টগ্রামের প্রখ্যাত দানবীর মরহুর সৈয়দ মোহাম্মদ নুর উদ্দীন এককভাবে এই ক্যাথ ল্যাব প্রতিষ্ঠায় অর্থায়ন করেছিলেন। তিনি কোনদিন তাঁর নাম প্রকাশ করতে না করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই দানবীরের নাম প্রকাশ করে বলেন, তাঁর একক অর্থায়নে চট্টগ্রামের সর্বাধুনিক ক্যাথ ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্যাথ ল্যাব (কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন) হৃদযন্ত্রের চিকিৎসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। হৃদরোগের চিকিৎসায় অপারেশন ছাড়া অন্যান্য প্রায় সব কার্যক্রমই ক্যাথ ল্যাবে পরিচালিত হয়। মাংসপেশি, ভালভ (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথ ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। উক্ত পরীক্ষায় হৃদযন্ত্রে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভালভকে ফোলানোসহ যাবতীয় চিকিৎসা ক্যাথ ল্যাবে করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং টেকনেসিয়ান দ্বারা ক্যাথ ল্যাবে উপরোক্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে খুব বেশি হাসপাতালে ক্যাথ ল্যাব নেই। মাত্র চার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ক্যাথ ল্যাব ছিল।

চট্টগ্রামের অন্যতম চিকিৎসালয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ক্যাথ ল্যাব ছিল না। এতে হৃদরোগের চিকিৎসায় মা ও শিশু হাসপাতাল বেশ পিছিয়ে ছিল। সেই অভাব ঘুচানোর জন্য মা ও শিশু হাসপাতালের নতুন ভবনে হৃদরোগ চিকিৎসার একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা এই ইউনিটের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্যাথ ল্যাব। মা ও শিশু হাসপাতালে চট্টগ্রামের সর্বাধুনিক ক্যাথ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা বলেছেন, ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকেই এই ক্যাথ ল্যাবের প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্টই সংগ্রহ করা হয়েছে। ডোনার সৈয়দ মোহাম্মদ নুর উদ্দীনের দাবি ছিল সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ। তিনিই এই ক্যাথ ল্যাবে প্রথম এনজিওগ্রাম করার কথাও বলে রেখেছিলেন। কিন্তু ক্যাথ ল্যাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

গতকাল মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যাথ ল্যাবে ইকুইপমেন্ট স্থাপন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাথ ল্যাবটি চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর এই ক্যাথ ল্যাবে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ।

গতকাল হাসপাতালের পরিচালনা কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা ক্যাথ ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম শেষ বারের মতো পরিদর্শন করেছেন। এই সময় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন, সদস্য ড. ইঞ্জিঃ রশীদ আহমেদ চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর পারভেজ, সদস্য খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, সিপিডিএল এর এমডি ও সিইও ইফতেখার হোসেন, হাসপাতালের পরিচালক ( প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, বিভাগীয় প্রধান (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক আবু তারেক ইকবাল, উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, উপপরিচালক (মেডিকেল এ্যাফেয়ার্স) ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি) ডা. এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত) ডা. কামরুল হাসান, ইমাম রাজি ইবনে জাহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মা ও শিশু হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবু তারেক ইকবাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটি চট্টগ্রামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর চেয়ে অনেক কম খরচে এখানে হৃদরোগের চিকিৎসা মিলবে। এনজিওগ্রাম কিংবা রিং বসানোর খরচও অন্যান্যা হাসপাতাল থেকে অনেক কম হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করবো তা হচ্ছে রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা এই ক্যাথ ল্যাবে হৃদরোগের চিকিৎসা পাওয়া যাবে। কেউ যদি রাতের দুইটার সময়ও রিং বসাতে চান তাহলে তাও সম্ভব হবে। কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসায় এই ক্যাথ ল্যাব সর্বাত্মক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবে। ইউরোপের বিভিন্ন ইকুইপমেন্টে সমৃদ্ধ এই ক্যাথ ল্যাবে রোগ নিরূপনসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম বেশ সুনিপূণভাবে সম্পন্ন হবে।

মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল করিম আজাদ বলেন, জনগণের টাকায় জনগণের হাসপাতাল হচ্ছে আমাদের মা ও শিশু হাসপাতাল। তাই খরচের ব্যাপারটি সবসময় আমরা মাথায় রাখি। ক্যাথ ল্যাবের চিকিৎসা সেবায়ও আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন বিষয়ে দর নির্ধারণ করেছি। ১৮ হাজার টাকায় এনজিওগ্রাম এবং ৭০ হাজার টাকায় রিং বসানো সম্পন্ন করা যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী আশা দিয়ে ভারতে যান, কিছু পূরণ হয় না : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধট্রান্সশিপমেন্ট