মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে গত দু্ই বছর ঈদের আনন্দ ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেনি নগরবাসী। চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় রমজানের ঈদের মতো এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতেও নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। যান্ত্রিক জীবনের গ্লানি মুছে পরিবার, নিকটাত্মীয় ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দিনভর আনন্দে মেতেছিলেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।
নগরীর বিনোদন কেন্দ্র চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড, কাজীর দেউড়ি শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, মেহেদিবাগ ওয়ার সিমেট্রি এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন দর্শনার্থীদের ঢল ছিল। তবে গতকাল তুলনামূলকভাবে আগের দুদিনের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম ছিল। গতকাল দুপুরে ফয়’স লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সুলতানা আকতার বলেন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে এসেছি। সন্তানদের আনন্দ দেখতে কার না ভালো লাগে। হাজার হাজার মানুষের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমারও খুব ভালো লাগছে। ফয়’স লেকে সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, রেড ড্রাই স্লাইড, ইয়েলো ড্রাই স্লাইড, বাগ বাউন্স রাইডে চড়ে শিশুরা আনন্দ মেতে ওঠে।
নবম শ্রেণীর ছাত্র আদনান বিন আবির বলে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য আব্বু-আম্মুর সাথে ফয়’স লেক এসেছি। করোনার জন্য অনেক দিন আসতে পারিনি। এবার আসতে পেরে ভালো লাগছে। ফয়’স লেক সী ওয়ার্ল্ডে দিনভর শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীরা ডিজে গানের তালে জলকেলিতে মেতেছিলেন। এছাড়া ওয়েভপুলের ড্যান্সিং জোনে দল বেঁধে নাচে-গানে বিভোর ছিল কিশোর-কিশোরীরা। মধ্যবয়স্করাও বাদ যায়নি। টিউবে চড়ে, মাল্টি স্লাইড ও ডোম স্লাইডে স্লাইডিং করে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাদের।
ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কের উপ-ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ঈদের প্রথম দিন খু্ব বেশি দর্শনার্থী আসে না। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন জমজমাট ছিল। আজ (গতকাল) ফয়’স লেক পার্ক ও সী ওয়ার্ল্ডে প্রায় ৪ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে।
গতকাল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এছাড়া চিড়িয়াখানায় বাঘ ও হরিণের খাচার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকে সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। তবে শিশুরা সবচেয়ে বেশি কাটিয়েছে বানর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খাঁচার সামনে। অভিভাবকদেরও বিভিন্ন পশু-পাখির নামের সাথে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিতে দেখা গেছে।
চিড়িয়াখানায় আসা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর বাচ্চাদের নিয়ে তেমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। এ বছর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য চিড়িয়াখানায় এসেছি। চিড়িয়াখানার পশু-পাখি দেখে বাচ্চারাও খুব খুশি।
এদিকে বহদ্দারহাট এলাকার স্বাধীনতা কমপ্লেঙেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। দর্শনার্থীরা জাতীয় সংসদ ভবন, আহসান মঞ্জিল, কার্জন হল, কান্তজির মন্দির, লালবাগ কেল্লা, বড় কুঠি, ছোট কুঠি, সেন্ট নিকোলাস চার্চ, দরবার হল, হাই কোর্ট, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ট্রেনের নিচে ব্রিজ, ছয়টি কিউচ (বসার স্টল), চিরন্তন পল্লী, সোনা মসজিদ, পাহাড়পুর বিহারসহ উল্লেখযোগ্য মিনি স্থাপনাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। এছাড়া রিভলবিং রেস্টুরেন্টে খাবারের স্বাদ নিতে অনেকে পরিবার নিয়ে ছুটে যান। অন্যদিকে ফ্যামিলি কোস্টার, প্যাডেল বোট, বেবী ক্যাসেল, বেলুন হুইল, বাম্পার কার, মিউজিক সুইং, আরবি ট্রেন, কয়েন বোট, সি ওয়ার্ল্ড ও কিডস জোনে বাচ্চাদের আনন্দ করতে দেখা যায়।
স্বাধীনতা কমপ্লেঙের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী জনি আজাদীকে বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে কোরবানির ঈদের ছুটিতে পার্কে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। প্রথম দিন খুব বেশি না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন দর্শনার্থী বাড়ে।
কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কেও দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। ঈদের ছুটি উপভোগ করতে শিশুদের সাথে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষও পার্কে ভিড় করেন। পার্কে শিশুরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দে মাতে। সেই আনন্দে সামিল হয়েছেন বড়রাও।
অপরদিকে ঈদের ছুটি উপভোগ করতে দর্শনার্থীরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, সিআরবি, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু ও অভয়মিত্র ঘাটে ছুটে যান।











