নিখোঁজের তিনদিন পর নগরের শুলকবহর এলাকায় মির্জা খালে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে মো. কামাল উদ্দিনের (১৪) মরদেহ। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ১১টা ৫৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। পরে কামালের বাবা আলী কাউছার এসে নিশ্চিত করেন উদ্ধার হওয়া লাশটি তার ছেলের। এর আগে গত সোমবার বিকেলে ষোলশহর এলাকায় চশমা খালে খেলনা কুড়াতে নেমে নিখোঁজ হয় সে। নিখোঁজ হওয়ার স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া জায়গার দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া ক্রস কালভার্ট দিয়ে কামালের মরদেহ মির্জা খালে চলে আসে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় কামালের লাশ ফুলে গেছে। তাকে চেনা যাচ্ছিল না। তবে গায়ের পোশাক দেখে তার বাবা ও বন্ধু রাকিব লাশ শনাক্ত করেছে। ছেলের লাশ শনাক্ত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামালের পিতা। এ সময় তিনি ‘আমার বাবাটা আর নেই, বাবা, বাবা বলে বিলাপ করছিলেন।’ পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখানেও বুকফাটা কান্না করছিলেন তিনি। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার ছেলের চোখ তো ফুলে গেছে। চেহারাও চেনা যাচ্ছে না। যে কাপড় গায়ে ছিল সেটা দেখে চিনেছি।
ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর রবিউল আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলাম। যে স্পটে সে হারিয়েছে সেখানে পাইনি। যেহেতু বৃষ্টি হয়েছে এবং পানির প্রেসার ছিল তাই আমাদের ধারণা ছিল ঘটনাস্থল থেকে দূরে বা আশেপাশে চলে গেছে। ওই হিসেবে আমরা মির্জা খালে অভিযান চালাচ্ছিলাম। শেষ পর্যস্ত যেখানে তাকে পাওয়া গেছে তার একটু আগেই আমরা পৌঁছুলে এক লোক জানায়, একটা লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখা গেছে। তাকে উদ্ধার করে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে লাশটি বুঝিয়ে দিই।
ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আরাফাতুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কামালের বাবা এসে শনাক্ত করেছে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি তার ছেলের।
নগরের আন্দরকিল্লা মাছুয়ার্ঝণার বাসিন্দা আল কাউছার ষোলশহর রেলস্টেশনে ছেলে কামালকে নিয়ে ভাসমান দিন কাটাতেন। তাদের সঙ্গে স্টেশনে মা-বাবাহীন বেড়ে ওঠা কামালের সমবয়সী রাকিব। গত সোমবার বিকেলে খেলনা দেখে কামালকে সাথে নিয়ে ষোলশহরস্থ চশমা খালে নামে রাকিব। খেলনায় তুলে সেখানে সাঁতারও কাটে তারা। একপর্যায়ে স্রোতে উল্টে গিয়ে ভেসে যায়। খালের বাঁধে আটকে রক্ষা পায় রাকিব। ভয়ে এ ঘটনা সাথে সাথে কাউকে জানায়নি রাকিব। সন্ধ্যায় বাবা আলী কাউছার জানতে পেরে একা একা ছেলের খোঁজ করেন। পরদিন মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তল্লাশি চালান। এরপর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোডেকের কর্মী মোহন ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে ৪টার পর থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা এবং পরদিন বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়েও সন্ধান মিলেনি কামালের। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৮টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট চশমা খালের মুরাদপুর অংশে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ। এর আগে গত ৩০ জুন একই খালের মেয়র গলি এলাকায় পড়ে যায় একটি সিএনজি অটোরিকশা। এতে অটোরিকশা চালক ও এক যাত্রীসহ মারা যায় দুইজন। এ ছাড়া ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় সাদিয়ার মরদেহ। নগরে খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানির জন্য চসিক ও সিডিএকে দায়ী করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। অবশ্য গত মঙ্গলবার উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কামালের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে মন্তব্য করেন।












