সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট (নিকডো) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একযোগে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধে ফের আল্টিমেটাম দিয়েছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। দুয়েকদিন পর যেকোন মুহূর্তে এ সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটি লিখিত ভাবে জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজীব সিন্ধীর ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, পিপিপি’র প্রধান নির্বাহী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) এবং নিকডো ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ১৫ অক্টোবর একই রকম এক চিঠি দিয়ে সেবা বন্ধের আল্টিমেটাম দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
পাশাপাশি স্যান্ডরের সেন্টারের প্রবেশমুখেও নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় সরকারের কাছে ২২ কোটি টাকার বেশি পাওনা বকেয়া থাকার কথা জানিয়েছিল স্যান্ডর। অবশ্য, মন্ত্রণালয় ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরে সেবা চালিয়ে নিতে সম্মত হয় সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠান। তবে আশ্বাস পেলেও এখনো পর্যন্ত বকেয়া পাওনা বাবদ কোন টাকা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি দাবি করে ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড–এর ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান গতকাল আজাদীকে বলেন, ওই সময় থেকে বকেয়া বেড়ে এখন ৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমরা আশ্বাস পেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পাওনা বুঝে পাচ্ছিনা। কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে। অর্থাভাবে স্টাফদের বেতন–ভাতা বন্ধের পাশাপাশি সাপ্লাইয়ারদের (সরবরাহকারী) টাকাও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারাও (সাপ্লাইয়াররা) আমাদের আর বিশ্বাস করছে না। ফলে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদানে যে কাঁচামাল দরকার আমরা সেগুলো পাচ্ছি না। যা আছে, তা দিয়ে বড়জোর কয়েকদিন চলতে পারে। এরপর সেবা বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। যদিও সেবা বন্ধ হোক, আমরা তা কোনভাবেই চাই না। কিন্তু আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
এদিকে, কাঁচামাল সংকটে গতকাল দুপুরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ ছিল চমেক হাসপাতালের স্যান্ডরের এ সেন্টারে। দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ সেবা বন্ধ ছিল। এসময় স্যান্ডর সেন্টারের সামনে রোগী ও স্বজনদের ভিড় বেড়ে যায়। কাঁচামাল সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সেশন শুরু করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড–এর ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান বলেন, ১২টায় সেশন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু করা যায়নি। ওই কাঁচামালটি কিনে আনতে যে সময়টুকু লাগে, ওই সময়ের জন্য সেবা বন্ধ ছিল। পরে কাঁচামালটি কিনে আনার পর সেবা চালু হয়।
উল্লেখ্য, পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসে দুটি সেন্টার স্থাপন করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। এর মধ্যে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৫৯টি এবং চমেক হাসপাতালে ৩১টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের পুরনো (মূল) ভবনের নিচ তলায় (ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের পাশে) এই ডায়ালাইসিস সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সেন্টারে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর সেবাদান বাবদ সরকারের কাছে ২২ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া রয়েছে দাবি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একযোগে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের আল্টিমেটাম দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধে পুনরায় আল্টিমেটাম দিয়েছে সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠান।
চিঠিতে বলা হয়েছে– বিশাল অংকের বকেয়া নিয়ে সেবাদান অব্যাহত রাখতে কোম্পানির সক্ষমতা নেই। অর্থাভাবে স্টাফদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিল পরিশোধ করতে না পারায় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চলতি মজুদে কয়েকদিন সেবা দেয়া সম্ভব। এরপর যেকোন মুহূর্তে সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে মর্মে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রোগীদের সেবায় বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখার অনুরোধও করা হয়েছে চিঠিতে।
স্যান্ডরের এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে অবহিত রয়েছে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, তারা (মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর) এ বিষয়ে কাজ করছে।
এর আগে গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকেও দুটি সেন্টারে একযোগে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর আগের দিন (৪ জানুয়ারি) রাতেই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। স্যান্ডর কর্তৃপক্ষের দাবি– ওই দিন (৪ জানুয়ারি) বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করে। সরকারের ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু প্রায় এক মাসেও সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় ২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর। ৮ ঘণ্টা পর বিকেল চারটার দিকে পুনরায় সীমিত আকারে এ সেবা চালু করা হয়। কয়েক দিনের মাঝে বিল পরিশোধ করা হবে মর্মে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলে পুনরায় সেবা চালু করে ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড।











