রাশিয়া থেকে তেল আনতে গিয়ে কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের নৌ–ড্রোন হামলার শিকার ‘এমটি কায়রোস’ জাহাজের চার বাংলাদেশি নাবিকের মধ্যে দেশে ফিরছেন তিনজন। তবে বাংলাদেশি অপর নাবিক ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিকে কূলে আনতে গিয়ে ‘জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন’। তার সঙ্গে আরও তিন দেশের নয়জন নাবিক রয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
জাহাজটিতে থাকা বাংলাদেশি নাবিক চতুর্থ প্রকৌশলী মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন বলেন, হামলায় জাহাজটির ইঞ্জিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মালিকপক্ষ সেটিকে টেনে তুরস্কের জলসীমায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তিনিসহ ১০ নাবিক ওই জাহাজে যান। এখনো তারা জাহাজেই রয়েছেন। সেটিকে তুরস্কের জলসীমায় নিলেও নোঙর করা যায়নি। বিরূপ আবহাওয়া ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে ভাসতে ভাসতে এখন সেটি বুলগেরিয়ার জলসীমায় চলে গেছে। প্লাবন বলেন, ‘আমরা বুলগেরিয়ার কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা চেয়েও পাইনি। দুইদিন ধরে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজে ভাসছি। জাহাজে পাওয়ার না থাকায় কোনো আলো নেই, মোবাইল ও খাবার পানি ফুরিয়ে আসছে। ড্রোন হামলায় জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় জাহাজটি ভেঙেও যেতে পারে।’
সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নাবিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওর্য়ার্কাস ফেডারেশনের’ সঙ্গে যোগাযোগ করে আটকা পড়া নাবিকদের উদ্ধারে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ক্রুড অয়েল ভরার জন্য মিশরের সুয়েজ বন্দর থেকে রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নভোরোসিস্ক যাচ্ছিল ২৭৫ মিটার লম্বা চীনা জাহাজ ‘এমটি কায়রোস’। কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করার সময় তুরস্কের জলসীমায় গত ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল পৌনে ৫টায় ইউক্রেনের ‘নৌ–ড্রোন’ হামলার শিকার হয় জাহাজটি।
হামলায় সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে দুই ঘণ্টার মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ‘এমটি কায়রোস‘। তুরস্কের কোস্টগার্ডের সদস্যরা উদ্ধার করে ওই জাহাজের ২৫ নাবিককে। তাদের মধ্যে চার বাংলাদেশি ছিলেন। আর চীনের ১৯ জন এবং মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার একজন করে ছিলেন।
বাংলাদেশি নাবিক চতুর্থ প্রকৌশলী মাহফুজুল ইসলাম, অয়েলার হাবিবুর রহমান, পাম্প ম্যান আসগর হোসাইন ও ডেক ক্যাডেট আল আমিন হোসেনকে উদ্ধারের পর তুরস্কের ইজমিত শহরে নেওয়া হয়। জাহাজটির সব নাবিককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ‘এমটি কায়রোস’ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি চারজনের মধ্যে হাবিবুর, আসগর ও আল আমিন গতকাল শনিবার রাতেই দেশে ফেরার কথা ছিল। তবে কৃষ্ণ সাগর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি সরিয়ে কূলে আনতে গিয়ে আটকা পড়েন বাংলাদেশি প্রকৌশলী প্লাবনসহ ১০ নাবিক।
সন্দ্বীপের ছেলে আসগর বলেন, জাহাজটিতে এক বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। জাহাজটি নিরাপদে কূলে ভেড়াতে পারলে তারা দেশে ফিরবেন।
জাহাজটিতে থাকা নাবিক প্লাবন বলেন, ‘ইউক্রেইনের নৌ–ড্রোন হামলার পরও বেঁচে ফিরেছি। বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও এখন আমরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে ওই জাহাজেই আছি।’
প্লাবনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিতে চীনের সাতজন এবং মায়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার একজন করে নাবিক রয়েছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হেসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিকে তুরস্কের উপকূলে ‘স্যালভেজ’ করানোর জন্য মালিকপক্ষ ১০ নাবিককে সেখানে পাঠিয়েছিল। তারাই এখন বিপদে রয়েছে। জাহাজটির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, বুলগেরিয়ার কোস্ট গার্ডকে বলা হলেও সহায়তা মেলেনি বলে জেনেছি। নাবিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কাস ফেডারেশনের’ সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে সহায়তা চেয়েছি।’











