চেরাগী মোড়ে দুই গ্রুপে মারামারি, আহত তিন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ জুন, ২০২২ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও কটুক্তির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পথে সাবেক দুই ছাত্রলীগ নেতার অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হন। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন মো. সোহেল (২৮), মো. রাসেল (২৮) ও মো. ফয়জুল আকবর (২৫)। তারা চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী পরিদর্শক (পরিদর্শন) রুবেল হাওলাদার আজাদীকে বলেন, এখনও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও হাতাহাতির ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। জানা গেছে, চেরাগী এলাকায় গতকাল দুপুরে বিবাদে জড়িয়ে পড়া দু’টি পক্ষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রসুল নিশান ও সিআরবি জোড়া খুনের মামলার আসামি সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী। দুই জনই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটিতে পদ প্রত্যাশী। নিশান ও লিমন দুজনই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, আগে থেকেই কিছু ছেলে চেরাগী পাহাড় আজাদী গলির সামনে আড্ডা দিচ্ছিল। এসময় হঠাৎ একটি মিছিল থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে বেশকিছু ছেলে চেরাগী পাহাড় এলাকায় প্রবেশ করে। কয়েকজনের হাতে লাঠিও ছিল। সেই সময় এই এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত সুজয়মান বড়ুয়া জিতুসহ অন্তত ত্রিশজন মিলে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজনকে মারধর শুরু করে। এসময় বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন।

চেরাগী পাহাড়ের স্থানীয় এক যুবক বলেন, চেরাগী পাহাড় এলাকায় বহিরাগতরা এসে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঝামেলা সৃষ্টি করে। তাদের এসব ঘটনার কারণে স্থানীয়দের পড়তে হচ্ছে পুলিশের তোপের মুখে। তিনি আরও বলেন, মারামারি করতে আসা ছেলেগুলো আকবরশাহ এলাকার। আকবরশাহ এলাকার পূর্বের বিরোধের শোধ নিয়েছে প্রতিপক্ষ চেরাগী পাহাড় এলাকায়।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রসুল নিশান সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসক্লাবে মহানগর যুবলীগের নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে আমরা আজাদী গলিতে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। ওই সময় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা লিমনের অনুসারী খালেদ হোসেন অন্তু, সুজয়মান বড়ুয়া জিতু, ফয়সাল রাজসহ আরো ২০ থেকে ৩০ জন তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আমাকেও মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক হামলা।

সাংগঠনিকভাবে আমাদের ধ্বংস করার পাঁয়তারা থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে, যেন আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, রাজনীতি না করতে পারি। ওরা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে, আমরাতো ভাই এসব করি না। হামলাকারীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি, নেতাকর্মীদের চিকিৎসার পর থানায় মামলা করতে যাব।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাবলু কুমার পাল আজাদীকে বলেন, প্রেসক্লাবে যুবলীগের বিক্ষোভ সভায় যোগ দিতে লিমনের নেতৃত্বে একটি মিছিল যাচ্ছিল। এসময় মিছিল থেকে কিছু ছেলে বিক্ষিপ্ত হয়ে চেরাগী পাহাড় এলাকায় মারামারি করে। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিতে তারা পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, হেলদি ওয়ার্ড জামালখানে সন্ধ্যা হলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। চেরাগীর অলি-গলিতে জমিয়ে তুলে আড্ডা। কথায় কথায় মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এখন এখানে প্রতিদিনের ঘটনা। এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ে তারা। অথচ একটা সময় মিডিয়া ও সংস্কৃতি পাড়া হিসেবে খ্যাত ছিল চেরাগী পাহাড় এলাকা। সশস্ত্র কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। গত ২২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ পুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের মাত্র বিশ গজ দূরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হন কিশোর আসকার বিন তারেক (ইভান)। সেও আরেক কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবাদ-মুখর চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধনিজেদের কারখানায় উৎপাদিত কেমিক্যালেই বিপর্যয়