বাংলাদেশে করোনার ২য় স্পেল ইতিমধ্যেই আঘাত করেছে। এই সত্যটি আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পূর্বেই অনুধাবন করতে পেরে সতর্কবাণী প্রদান করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশও জারী হয়েছে। মাস্ক বিহীন জনগণকে ২০০/ আর্থিক জরিমানা এবং অনাদায়ে ২ দিনের জেল সংক্রান্ত একটি বিধান বর্তমান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ আদেশটি কে বা কোন সংস্থা বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে হয়তো সন্দেহ বিদ্যমান।
কিছুদিন আগে খুলনা জেলা প্রশাসন নিজ উদ্যোগে জনসচেতনতার অংশ হিসাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ এবং সময়োপযোগী কার্যক্রম। কিন্তু দেশে সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যকর বাস্তবায়ন ব্যতীরেকে ইহার প্রয়োগ না হলে দেশে করোনার ২য় স্পেলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।
উন্নত বিশ্বে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার সংখ্যা অনুযায়ী লক ডাউনের সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করে। সে হিসাব মোতাবেক ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লক ডাউনে চলে গেছে। আমাদের দেশের অবস্থা জানি না বলে ক্ষমা প্রার্থী। বাংলাদেশ সরকার এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে করোনার ১ম ধাপ ভালোই সামাল দিয়েছে। যদিও প্রজাতন্ত্রের সরকারি সেবকগণ অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাগণ আইন ভংগকে ক্ষমতার দাম্ভিকতা মনে করে। আইন প্রণেতারা যখন দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করাকে তাঁর আভিজাত্য/ স্ট্যাটাস মনে করেন, সেদেশের জনগণও যদি বিশৃংখল আচরণ করেন, তা অতি স্বাভাবিক বিষয় বলেই বিবেচ্য। তাই ‘ঝিঁ-কে মেরে বউকে শিক্ষা দেয়া’ প্রবাদটা আদতেই কার্যকরী একটি উত্তম পন্থা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের অসচেতনতা আমাদের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্য ফু্টিয়ে ওঠে। এটা অস্বীকার করার মতন বুকের পাঠা আমাদের নেই। রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রাংশ মরিচাক্রান্ত – এ এক কঠিন সত্য। অস্বীকার করার জো নেই।
কেন এই ব্যর্থতা, তা বিশ্লেষণের সময় এখন নয়। এখন সময় সমন্বিত উদ্যোগে করোনার ২য় ধাপ মোকাবিলা করা। গতবারের মতন যেন আবারো আমরা উজবুক না বনি, এবার তা প্রথম হতেই নজরে আনতে হবে।
২০২০ এর জানুয়ারিতে যখন চীনের উহান শহর হতে মহামারী করোনার আঘাতের খবরাখবর আমাদের নীতিনির্ধারকগণ পাচ্ছিলেন, তখন তারা একে মোটেও গুরুত্ব/পাত্তা দেননি বলে আমাদেরকে Collateral Damage দিয়ে করোনা মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে হিমসিম খেতে হলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী আচরণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশ করোনা প্রাদুর্ভাব লেটার মার্ক দিয়েই পাস করেছে বলে প্রতীয়মান। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেখানে করোনা ছাতিয়ানাশ করে ফেলেছে, সেখানে আমরা মোটামুটি ভালোভাবেই মহামারী মোকাবেলা করেছি।
কিন্তু বর্তমান অবস্থা বিপদজনক। জনগণের মাঝে অসচেতনতা, ড্যামকেয়ার ভাব, মাস্ক ও হাত ধোয়ায় অনীহা, জনসচেতনতা পুনরায় প্রবর্তনে সংশ্লিষ্ট মহলের ঢিলেমিপনা, প্রতি ৪২ জন ভর্তি রোগীর মাঝে একজনের মৃত্যু সংখ্যা, সর্বমহলে সমন্বয়হীনতা আমাদের এক অন্ধকার দিকে ধাবিত হবার ইংগিত দিচ্ছে।
ভ্যাকসিন জনগণের মাঝে ২০২১ এর মধ্যবর্তী সময়ের পূর্বে আগমনের আশা করছি। হয়তো দু-তিন মাস এদিক সেদিক হতে পারে। আজ ডিসেম্বর ২০২০ হতে জুন ২০২১ সময়টা আমাদের একত্রিত হয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। এটা কেবলি সরকারের উপর ছেড়ে দেয়াটা ঠিক হবে না। আমরা যারা সচেতন নাগরিক সমাজ, আমাদেরও দায়িত্ব আছে এই উদ্যোগে সামিল হয়ে সকলে মিলেমিশে কাজ করবার। আমাদের নিজ স্বার্থেই তা করা প্রয়োজন এই সত্যটি অনুধাবন করা অতীব জরুরি।
এক্ষেত্রে করণীয় কিছু সুপারিশ সকলের সদয় অবগতি ও কার্যক্রমের জন্য উপস্থাপন করছি। সেই সঙ্গে দুঃখজনক হলেও বিষয়টি সত্য যে, বাংলাদেশে এতো প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, সচিব মহোদয়ের ছড়াছড়ি থাকলেও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ব্যতিরেকে কোনকিছুই দৃশ্যমান হয় না।
১। মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ায় ক্লিপসমেত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতে ক্রমাগত বিজ্ঞাপন প্রচার, জাতীয় দৈনিকে সপ্তাহকাল ধরে ক্রমাগত বিজ্ঞাপন প্রকাশ। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
২। এক সপ্তাহ পর পুলিশকে দিয়ে আইন প্রয়োগকরণ নিশ্চিত করা। সাথে সাথে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা করতঃ জনগণকে জেল জরিমানার দৃশ্যসমেত মিডিয়ায় ঘনঘন প্রচার করণ।
৩। দেশে করোনা মোকাবিলা করতে হলে হাসপাতাল, চিকিৎসক ও আনুসাংগিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে এখন হতেই সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রস্তুত করে রাখা।
৪। ঢাকা সিএমএইচের অভিজ্ঞ প্রশাসকদের এ বিষয়ে জাতীয় কমিটি ও মনিটরিং সেল গঠন করে সেনাবাহিনীকে এই কার্যক্রম মনিটরিং করণ দায়িত্ব প্রদান করার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে যারা দৈনিক প্রেস ব্রিফিং করতঃ জনগণকে বিষয়টির আপডেট প্রদান করতে পারে।
৫। লেট করলেই দেরী হবে এটা মনে রেখে প্রায়োরিটি বেসিসে কার্যক্রম গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। One Stop Service নিশ্চিত কল্পে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। করোনার মাঝে ঘূর্ণিঝড় আইলা আমরা যেভাবে মোকাবিলা করেছি, তদ্রুপ এখন আমাদের চিন্তা চেতনা ও কার্যক্রমে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার মানসিকতা থাকতে হবে।
হয়তো আমার চিন্তায় শংকার মাত্রা অধিক বলেই এতো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। কথায় আছে না Offence is the best Defence.
আমি একজন আশাবাদী মানুষ বিধায় আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক প্রসূত এই কার্যক্রমের নিশ্চিত সাফল্য খুব সহজেই সম্ভব। আমরা আমাদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাবো এই বিশ্বাস রেখেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
লেখক : সামরিক কর্মকর্তা









