সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বাদ নেই চট্টগ্রামও। এরপরও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশক নিধন কার্যক্রমে গতি আসছে না বলে অভিযোগ করেছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, সংস্থাটির মশার কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রম অনেকটা ‘রুটিন ওয়ার্ক’ এ সীমাবদ্ধ। যা অনেকটা ‘ঢিলেঢালা’ভাবে চলে আসছে। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, নিয়মিত কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। একইসঙ্গে ৪১ ওয়ার্ডে মশার হটস্পট বা ‘রেড জোন’ চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
জানা গেছে, সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনায় অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চসিককে একটি কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত রাখতে হবে এবং ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। অবশ্য এখন পর্যন্ত চসিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করেনি। এছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বছরব্যাপি মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে মানসম্মত কীটনাশক, জনবল এবং যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখতে হবে। চলতি বছরের প্রথম এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা গত মাসে অনুষ্ঠিত হলেও চলতি মাসে সভার রেজ্যুলেশন প্রকাশিত হয় এবং সিটি কর্পোরেশনের কাছে তা পাঠানো হয়।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন কীটনাশক সংকটের কারণে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম কিছুটা থমকে ছিল। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেন, অতীতে বিনা দরপত্রে গণখাতের ক্রয়বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) ব্যবহার করে একাধিকবার ওষুধ কিনেছে চসিক। এক প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুবিধা দিতে এ ধারাটি কাজে লাগানোর প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে কীটনাশক কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে গত মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বশেষ চার মাসে প্রকিউরমেন্ট শাখা দুইবার চেষ্টা করেও ওষুধ কিনতে পারেনি। ফলে ওই সময় ওষুধ সংকটের কারণে মশক নিধন কার্যক্রম গতি হারায়।
অবশ্য সম্প্রতি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কীটনাশক কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার লিটার পূর্ণাঙ্গ মশার ধ্বংসকারী এডাল্টিসাইড এবং লার্ভা ধ্বংসকারী ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এর অর্ধেক কীটনাশক সরবরাহ করা হবে চসিকে। এরপর জোরালো করা হবে মশক নিধন কার্যক্রম।
সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী দৈনিক আজাদীকে বলেন, জুনের মাঝামাঝি সময়ে কীটনাশকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হব। তবে বর্তমানেও কীটনাশকের সংকট নেই। ১২শ লিটার লার্ভিসাইড (২ দশমিক ৮ এমএল এর সাথে ১০ লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা হয়), ৪০ কেজি মাসকুবার এবং দুই হাজার লিটারের বেশি এডাল্টিসাইড মজুদ আছে।
বর্তমানে মশক নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, প্রতিদিন ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টা–১২ টা পর্যন্ত এবং এবং সন্ধ্যার এক ঘণ্টা আগে ও পরে ফগিং করা হচ্ছে। এর বাইরে ওয়ার্ড পর্যায়ে আলাদা স্প্রে ম্যানও ওষুধ ছিটাচ্ছেন। এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা সার্ভে করে ৪১ ওয়ার্ডে রেড জোন চিহ্নিত করার কাজ করছি। তার তাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছি। চিহ্নিত করার পর সেখানে কীটনাশক ছিটানো জোরদার করা হবে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলী আজাদীকে বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম চলমান। চাহিদা অনুযায়ী মশার ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেয়র মহোদয় দেশের বাইরে থেকে আসার পর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হবে। সেখানে ডেঙ্গু রোধে আরো কী কী করণীয় রয়েছে তা ঠিক করে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে সাধারণ লোকজনের অভিযোগ, চসিকের মশার ওষুধ ছিটানে কার্যক্রম চলছে লোক দেখানো। মুরাদপুর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সিনান তালুকদার আজাদীকে বলেন, গত ছয়–সাত মাসে একবারও ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরও সিটি কর্পোরেশনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। হালিশহরের বাসিন্দা মোজাম্মেল বলেন, সিটি কর্পোরেশন তাদের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নগরবাসী মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেত। কিন্তু সেটাও ঠিকভাবে করছে বলে মনে হয় না।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি ধেকে এ পর্যন্ত ১৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়। এর মধ্যে চলতি মে মাসে ৪৫জন সনাক্ত হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন নালা–নর্দমায় জমাট হয়ে থাকা পানিতে কিউলেঙ মশার লার্ভা সৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি শুরু হলে আবার কিউলেঙ মশার উপদ্রব কমে যাবে। আবার বৃষ্টি বন্ধ হলে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা জন্মাবে।










