হুমায়ুন আজাদ : প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক

| শুক্রবার , ১২ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

হুমায়ুন আজাদ। কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক। তিনি একজন প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক। স্রোতের প্রতিকূলে চলা সত্য ভাষ্যের এক অনন্য পথিক হুমায়ুন আজাদ। হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাড়িখালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুর রাশেদ মা জোবেদা খাতুন। মা বাবার দেয়া নাম হুমায়ুন কবির। তিনি রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক (১৯৬২), ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৬৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৭৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনার মধ্যদিয়ে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ এবং প্রবন্ধগ্রন্থ রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: ‘রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা’। এ সময় তিনি ভাষাবিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি কবিতা লেখাতেও মনোযোগ দেন। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘জ্বলো চিতাবাঘ’। তাঁর ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক তিনটি গ্রন্থ যথা, ‘বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র’ (১৯৮৩), ‘চৎড়হড়সরহধষরুধঃরড়হ ওহ ইবহমধষর’ (১৯৮৩), ‘বাক্যতত্ত্ব’ (১৯৮৪)। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘বাঙলা ভাষা’ (দু-খণ্ড, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫), ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ (১৯৯৪), ‘মুহম্মদ আবদুল হাই রচনাবলী’ (তিন খণ্ড, ১৯৯৪), ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা’ (১৯৯৭); তাঁর ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক দুটি গ্রন্থ, ‘তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান’ (১৯৮৮), ‘অর্থবিজ্ঞান’ (১৯৯৯)। হুমায়ুন আজাদের রচনাবলীর মধ্যে ’শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা’ (১৯৮৩) ‘বিমানবিকীকরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ (১৯৮৮), ‘ভাষা-আন্দোলন : সাহিত্যিক পটভূমি’ (১৯৯০), ‘নারী’(১৯৯২), ‘নরকে অনন্ত ঋতু’ (১৯৯২),‘প্রবচনগুচ্ছ’ (১৯৯২), ‘সীমাবদ্ধতার সূত্র’ (১৯৯৩), ‘আধার ও আধেয়’ (১৯৯৩), ‘আমার অবিশ্বাস’ (১৯৯৭), ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ (১৯৯৯), ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’ (২০০৩) উল্লেখযোগ্য। তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ (১৯৯৪), ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫), ‘মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ’ (১৯৯৬), ‘যাদুকরের মৃত্যু’ (১৯৯৬), (১৯৯৯), ‘নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু’ (২০০০), ‘ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ’ (২০০১) ও ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা’ (২০০২) উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ যেমন লিখেছেন বড়দের জন্য তেমনি লিখেছেন শিশু-কিশোরদের জন্যও। ’লাল নীল দীপাবলি’ (১৯৭৬), ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ (১৯৮৫), ‘কতো নদী সরোবর’ (১৯৮৭), ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ (১৯৮৯), ‘বুকপকেটে জোনাকিপোকা’ (১৯৯৩), ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’ (১৯৯৬), ‘অন্ধকারে গন্ধরাজ’ (২০০৩) প্রভৃতি। তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপৌরকর পুনঃমূল্যায়ন : মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি