স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ

দাবি স্থায়ী ব্রিজ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২২ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্কা গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবছরের মতো এবারো স্বেচ্ছাশ্রমে ইছামতী খালের উপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন। গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে এনে শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করেন। গতকাল সোমবার গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য সাঁকোটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করবে শিয়ালবুক্কা গ্রামের অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দা।

জানা যায়, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে ইছামতি খালের উপর নির্মাণ করেন বাঁশের সাঁকো। কিন্তু বর্ষা এলেই তা আবার পাহাড়ি পানির ঢলে ভেসে যায়। ভাঙা গড়ার মাঝে এভাবেই চলছে শিয়ালবুক্কাবাসীর নিত্যদিনের চলাচল। বাঁশের সাঁকোয় চলাচল আর কত কাল, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা স্বেচ্ছাশ্রমে ১৩০ ফুটের দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন।

সবমিলিয়ে অর্ধ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্ষার আগ পর্যন্ত এটি দিয়ে চলাচল করা যায়। আবার পাহাড়ি ঢলে এটি ভেসে গেলে নৌকা যোগে পারাপার করি আমরা। গত ৮/১০ বছর থেকে এভাবেই চলছে আমাদের।

সরেজমিন দেখা যায়, এপারে রাজানগর ওপারে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের মাঝে ইছামতি নদী। দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগে এ নদীই একমাত্র বাধা। খরস্রোতা ইছামতির পশ্চিম পাশে শিয়ালবুক্কা গ্রাম। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসলাদি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়ে যাতায়াত করে। অন্যদিকে শিয়ালবুক্কায় একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর বাকী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর অপর পাড়ে। সেখানে গিয়েই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করুণ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় ডেলিভারি রোগীসহ অসুস্থদের। তাই গ্রামবাসী প্রতি বছর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেন এই বাঁশের সাঁকো। কিন্তু বর্ষা এলেই সেই সাঁকো নদীতে হারিয়ে যায়। সাঁকো ভেসে গেলেও থেমে থাকে না জীবন। গ্রামবাসী নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে তখন নৌকায় পারাপার হয়। বর্ষার পর আবারও তৈরি করেন সাঁকো। একটি পাকা সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ রয়েছেন স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিম উদ্দিন (৪২) বলেন, ছেলেমেয়েরা সাঁকো পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। বর্ষাকালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। একটি পাকা সেতু নির্মাণ করলে এলাকার লোকজন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারত। কৃষক নবাব মিয়া বলেন, ভোটের সময় সব নেতাই সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর তাঁরা আর সেতু নির্মাণ করে দেন না।

রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার বলেন, শিয়ালবুক্কায় ইছামতি খালের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণে প্রক্রিয়া চলছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম জানান, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার শিয়ালবুক্কায় সাঁকো দিয়ে মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করছেন। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ব্রিজ নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশাকরি দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোমেন-ল্যাভরভ ফোনালাপ
পরবর্তী নিবন্ধমাড়াইয়ের আগে ধানে দুর্বৃত্তের আগুন, দিশেহারা কৃষক