সুপারবাগ সংক্রমণ, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে নীরব এ ঘাতক

| মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী জুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে ‘সুপারবাগ ইনফেকশন’। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এই সুপারবাগ ২০১৯ সালে ১২ লাখের বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া তার বিরুদ্ধে কার্যকর সব ওষুধ প্রতিরোধে সক্ষম হয়ে ওঠে তখন সেটিকে সুপারবাগ বলা হয়। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপারবাগ সংক্রমণে ২০১৯ সালে যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন তাদের শরীরে সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও তা কাজে আসেনি। ভারতে দ্রুত এই সুপারবাগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির চিকিৎসকরা। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নামে এই নিরব ঘাতক যে দেশগুলোতে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে ভারত তার একটি। খবর বিডিনিউজের।
বিবিসি জানায়, দেশটিতে প্রতিবছর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে প্রায় ৬০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ পরিস্থিতি কীভাবে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে তা উঠে এসেছে নতুন এক সরকারি গবেষণা প্রতিবেদনে। মহারাষ্ট্রের কস্তুরবা হাসপাতালে চালানো জরিপে দেখা গেছে, পাঁচটি প্রধান ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেনকে (ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু) মোকাবেলায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিকের সবচেয়ে বেশি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল সেগুলো খুব কমই কাজ করছে। এসব প্যাথোজেনের মধ্যে রয়েছে কলেরা সংক্রামক ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া, নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া এবং শ্বাসনালী ও ত্বকের সংক্রামক রোগ ছড়ানো স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এসব প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রধান যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এসব রোগ নিরাময়ে ১৫ শতাংশেরও কম কার্যকর বলে চিকিৎসকরা প্রমাণ পেয়েছেন। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল একাধিক ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম অ্যাসিনেটোব্যাক্টার বাউমানি, যেটি সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা ফুসফুসের সমস্যার রোগীদের আক্রমণ করে।
ভারতের অনেক চিকিৎসক কোনো বাছবিচার না করেই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকেন বলে বিশ্বাস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অথচ ফ্লু বা সাধারণ সর্দিজ্বর, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মত ভাইরাস জনিত রোগ, এমনকী ডায়রিয়ার চিকিৎসায়ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। অথচ এইসব রোগের বেলায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো কার্যকারিতাই নেই। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ও বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে অনেকে এ রোগে আক্রান্তদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিয়েছে। এজন্য অবশ্য শুধু দেশটির চিকিৎসকদের দোষ দিলে হবে না। ভারতে মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনই নন। এমনকী স্বচ্ছল ও শিক্ষিত শ্রেণির মানুষও অসুস্থ হলেই চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে চাপ দেন।
ভারতের বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স রোধে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে সংক্রমণের হার কমানো জরুরি। নাহলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা মহামারীর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামীর ‘সুপারকন্টিনেন্ট’ অ্যামেশিয়া
পরবর্তী নিবন্ধমাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানের ওপর যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা