সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০ হাজার বইয়ের পাঠাগার : অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

| বৃহস্পতিবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

একটি অভাবনীয় কাজ উপহার দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপন করেছেন সুবিশাল একটি পাঠাগার। প্রায় ২০ হাজার বই সম্বলিত এই পাঠাগার ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে, বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির স্পিরিট ধারণ করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই সংগ্রহ করা হয়েছে এই পাঠাগারে। তথ্য, তত্ত্ব, গবেষণা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত করতে এই পাঠাগার নজিরবিহীন ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, এই গ্রন্থাগার বিদ্যার্থীদের আজীবন জ্ঞানার্জনের দক্ষতাসমূহ গড়ে তুলবে এবং তাদের কল্পনা শক্তিকে উন্নত করবে, যাতে তারা দায়িত্বশীল নাগরিকের জীবন নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার নেপথ্য কারণ হিসেবে সিএমপি কমিশনার বলেন, তক্ষশীলা কিংবা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। ভার্চুয়াল জগতের কৃত্রিম পরিবেশে অপ্রকৃত বাস্তবতার মাঝে আজ পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নতুনভাবে তুলে ধরতে সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে সমৃদ্ধ পাঠাগার। আমি মনে করি, জ্ঞানেন্দ্রিয় ও অন্তরেন্দ্রিয়ের মিলনের মাধ্যমে বই স্পর্শ করে যে পঠন-পাঠন হয়, তা স্থায়ী এবং গভীর।
সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে পাঠাগারটি স্থাপন করা হলো, সেটি সকলের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও যদি এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে জ্ঞানের চর্চায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে শিক্ষার্থী।
বলা জরুরি যে, মানুষের আলোকিত জীবনের উপকরণ হচ্ছে বই। জগতে শিক্ষার আলো, নীতি-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সভ্যতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি-সবই জ্ঞানের প্রতীক বইয়ের মধ্যে নিহিত। মানবজীবন নিতান্তই একঘেয়ে দুঃখ-কষ্টে ভরা, কিন্তু মানুষ বই পড়তে বসলেই সেসব ভুলে যায়। পৃথিবীতে বিনোদনের কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু বই পড়ার নির্মল আনন্দের কাছে সেগুলো সমতুল্য হতে পারেনি। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক কোনো মজাদার বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে যায় না। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের নেশায় ডুবে থাকা দরকার।
মনে রাখা দরকার, জ্ঞান অর্জনের জন্য বই অবশ্যই পড়তে হবে। বই আমাদের শ্রেষ্ঠ সাথী, যুগ যুগ ধরে বই মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতায় এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে পারি। তিনি বলেছেন, ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি’। বিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, ‘আমি যা জানি তা হচ্ছে একটি ফোঁটা মাত্র, যা জানি না তা হচ্ছে একটি মহাসমুদ্র।’ মানবজীবনে বইয়ের গুরুত্ব বোঝাতে বিখ্যাত লেখক বোর্হেস বলেছেন, আমি সর্বদাই স্বর্গকে একপ্রকার পাঠাগার রূপেই কল্পনা করেছি। আবার হার্বট স্পেনসার বলেছেন- ‘বই পড়া হলো অন্যের চোখ দিয়ে দেখা’। তাঁর এই উপলব্ধি বই পাঠের প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্ব দেয়। বই পাঠে আমরা লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই জানতে পারি। অনেক অদেখাকে দেখতে পাই, অজানাকে জানতে পারি। এ ব্যাপারে চার্লস ল্যাম্ব যা বলেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ- ‘আমি নিজেকে অন্যের মনে হারিয়ে ফেলতে ভালবাসি’। আসলে তিনি বইয়ের সঙ্গ বিশেষভাবে উপভোগ করেন। তিনিই আবার বলেছেন- ‘বই পড়া আসলে নিঃশব্দ কথোপকথন’। জন মিল্টন বলেছেন- ‘ভাল বই পাঠকের জীবনশক্তির উৎস, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত।’ বই পাঠকের উপর এমন প্রভাব ফেলে যেটা ভবিষ্যৎ বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য খুবই জরুরী। প্রত্যেকের জীবনে বই পড়া হলো গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। বই পড়ার ওপর তাই গুরুত্ব দিতে হবে। আজকাল কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল সুবিধা পেয়ে মোবাইল ইন্টারনেটে আসক্ত। সেখান থেকে তাদের চোখকে ফেরাতে হবে। নিয়ে আসতে হবে বইয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি পাঠাগার থাকে, তাহলে বই পড়ার ওপর একটা সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা সেখানে পাঠ নিতে পারবে তাদের পছন্দের বিষয়ে। পাঠাগার যে মানসিক উৎকর্ষতা, কাজকর্মে স্বচ্ছতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য কতোটা জরুরি, তা বুঝিয়ে দিতে হবে কাজের মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে