সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি

সাখাওয়াত হোসেন মজনু | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

: অনুকরণীয় একটি দৃষ্টান্ত।
: প্রেরণার একটি দৃষ্টান্ত পেলাম মুজিব শতবর্ষে। একজন সৈয়দ মো. আবু দাউদ (কবি বাদল সৈয়দ) তাঁর ক’জন সতীর্থ নিয়ে অসহায়, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা তাঁদের নিজস্ব অর্থে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিচ্ছেন, সহায়তা দিচ্ছেন। এই হৃদয়বান মানুষগুলো হয়েছেন প্রতিজন অসহায় শিক্ষার্থীর পিতা। পিতার দায়িত্বই তাঁরা পালন করছেন। সরকার করে দেবেন এমন চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক কিন্তু অন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সৃজনশীল মানুষ সৈয়দ মো. আবু দাউদ নিজ মন মানসের গভীরতায় বুঝতে পেরেছিলেন একজন দরিদ্র পিতার সন্তান, একজন অসহায় শিক্ষার্থীর মর্যাদাটা কি? সামান্য টাকার অভাবে একটি পরিবার, একজন শিক্ষার্থী কেমন করে ঝরে পড়ছে। এমন সত্যটা উপলব্ধি করেই তিনি খুঁজে নিয়েছেন কিছু সেবক মানুষকে যাঁরা শিক্ষার মর্যাদাটা অনুধাবন করেছেন। যদি এমন না হতো তাহলে হয়তো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়তে পারতো। এখন তারা লেখাপড়া করছে অর্থনৈতিক চিন্তামুক্ত হয়ে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে বা আরো এগুতে চাইছে। আমরা সবাই মানুষ কিন্তু ঐ মানুষগুলো অগ্রসর চিন্তা করার মানুষ। তাঁরা যদি এমন চিন্তা করে কাজে নেমে না পড়তেন তাহলে সৃষ্টিশীল মানুষরা এগিয়ে আসতেন না। এটা সমাজ গবেষণার ফসল। দীর্ঘ গবেষণায় সমাজের বাস্তব চিত্রটা এখানে স্পষ্ট হয়েছে। একজন, দু’জন সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীর হৃদয় যন্ত্রণার কথা জেনে, শুনে, বুঝে সেবার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রত্যক্ষ সহযোগিতার ক্ষেত্রটি। শিক্ষার সুযোগ পাওয়া ও শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দর্শন বুকে ধারণ করে যুদ্ধ করেছিলেন। মৌলিক অধিকারের একটি বিষয় শিক্ষা । সৈয়দ মো. আবু দাউদ তাঁর সতীর্থদের এক আদর্শের ছায়াতলে এনে শিক্ষা সেবার পথটিকে দরিদ্রের সমীপে নিবেদন করে মহান আল্লাহর স্নেহধন্য হয়েছেন। বিশ্ববিখ্যাত হার্ট সেন্টার নারায়না হাসপাতালের দেয়ালে ডা. দেবী শেঠীর চেম্বারের প্রায় নিকটে একটি বাণী লেখা রয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, Fortunate are those who helps the humanity. মানুষের সেবা দেওয়ার মাঝেই প্রকৃত তৃপ্তি পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছিলেন,
If you plan is for one year- Plant Rice.
If you plan is for ten years- Plant trees
If you plan is for hundred years- Educate people.
কনফুসিয়াস ও ডা. দেবী শেঠীর বক্তব্যগুলো পড়ে ও জেনে আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে, সৈয়দ মো. আবু দাউদ ও তাঁর সতীর্থরা শিক্ষা সেবার সৈনিক হিসেবে সভ্যতাকে শতবছরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। মানুষতো মানুষের জন্যই। প্রকৃত মানুষরাই পারেন অন্যের পাশে দাঁড়াতে। আজকে তাঁদের সহযোগিতা ও নির্দেশনায় যে দুস্থ শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবার এবং পরিবারের সদস্যরা যার যার ধর্মমতে প্রার্থনা করছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং এটাই পরহীতব্রত। দোয়া বলুন আশীর্বাদ বলুন তাতো চাইতে হয় না, কর্মের ফসলই দোয়ার ক্ষেত্র রচিত হয় বা করে। এই শিক্ষার্থীগুলোই একদিন সভ্যতাকে এগিয়ে নেবে এবং তারাওতো শিক্ষা সেবা নিয়ে এগুবে। এটাই সভ্যতার ক্রমবিকাশ, মেধা ও মন মানুসের অন্তর্নিহিত শক্তি। যারা এর চর্চা করেন তারাই সৃষ্টিশীল মানুষ। সবাই শ্রেষ্ঠ হতে পারেন না, তিনিই শ্রেষ্ঠ যিনি মেধা ও মননের চর্চা করে মানবতার পথ সৃষ্টি করেন। সে বিবেচনায় আমরা বলতে পারি শিক্ষার ক্ষেত্রটাকে আরো আলোকিত যারা করছেন তারা মেধার ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী প্রকৃত মানুষ।
চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশে এতিম শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করে তাদের শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেটি এস ও এস (SOS) পল্লী। এই প্রতিষ্ঠানে যেসব শিশু রয়েছে তারা প্রায় সবাই এতিম। তারা সবাই শিশু পল্লীতে থাকে। তাদের জন্য আলাদা ঘর আছে, প্রতি ঘরে ১৫/১৬ জন শিশু থাকে, তাদের জন্য একজন মা আছে, প্রতিটি ঘরের শিশুরা আধুনিক সুবিধা ও শিক্ষায় মানুষ হচ্ছেন। খেলার জন্য বড় খোলা মাঠ রয়েছে। তারা পড়েছে, জীবন ধারণ করেছে জার্মানির বিভিন্ন সেবক মানুষের আর্থিক সহযোগিতায়। এক একজন সেবক মানুষ একজন এতিম শিক্ষার্থী শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশুটি উচ্চ শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত ঐ সেবক তার পুরো দায়িত্ব পালন করেছেন। ঐ দেশের শিশুরাও পকেট মানি জমিয়ে ঐ শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিচ্ছেন। এই দানের ক্ষেত্রে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান বিবেচনা করা হয় না। এরা সবাই মানুষ। কথাটা হলো মানুষের জন্যই মানুষ। আমার অনুপ্রেরণার অংশ হচ্ছে সৈয়দ মো. আবু দাউদ ও তাঁর সতীর্থরা তাঁরা শিক্ষার্থীদের সাহায্য করছেন। শিক্ষা সেবা দিচ্ছেন। আগামী প্রজন্মের একটি অংশকে জাগিয়ে তুলেছেন। এটাই হচ্ছে সাফল্য।
আমাদের দেশটা, সমাজটা খুবই ভালো- শুধু প্রকৃত ভালোদের খুঁজে নিতে হয়। এই খোঁজার জন্য প্রয়োজন প্রখর দৃষ্টি। পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। বিশ্রামের এই সময়টা কিন্তু অলসতা নয়। আমাদের সমাজের অসহায় ছেলেগুলো যখন দৈন্যতায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তারা বিশ্রামের অবসরে চাতক পাখির মতো উদাস থাকে। একফোঁটা জল যখন পায় চাতক পাখি দৃষ্টি সীমা প্রসারিত করে। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা হচ্ছে চাতক পাখির মতোই। তারা যখন অলসতা বা অসহায় অবস্থার মাঝে শিক্ষা সহযোগিতার আলোপায় তখন তারা প্রকৃত দৃষ্টি ফিরে পায়। মানুষ হিসেবে শিক্ষা গ্রহণ করে বাঁচার আশা জাগে। এই আশা জাগানিয়া মানুষগুলো হচ্ছেন মহান আল্লাহর দূত। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সালাম ও কৃতজ্ঞতা। আমার চিন্তার দোলা আছে চিন্তার ফসল ফলানোর সামর্থ তেমন নেই কিন্তু এমন সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে থেকে সোহাগ দিতে ভালো লাগে। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই কারো এমন সফলতা দেখলে প্রশংসা করতে, দোয়া করতে একটু এগিয়ে যেতে চাই। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যের সময়টা হচ্ছে জীবন। এ জীবনের সময়টা খুব বড় নয়। এটাকে সময়মতো কাজে লাগাতে পারলে জীবন সাফল্য আসবে। মানুষের অর্থের প্রয়োজন এবং সেই অর্থের যথাযথ প্রয়োগ যদি ঘটানো যায় তাহলে এ সময়ের চেহারা পাল্টে যাওয়ার কথা।
সংবাদ পেলাম রাজখালীর এ জে এম গিয়াস উদ্দিন, অ্যাডভোকেট এম এ বারি ইনঞ্জিনিয়ার মফিজুল ইসলাম, আলহাজ্ব লিয়াকত আলী সজনে বিজনে এমনদের জন্য কাজ করছেন। গিয়াস ভাইতো তাঁর স্কুলের ৮০০ জন ছাত্র ছাত্রীকে সপ্তাহে ৬ দিন দুপুরে খাওয়ান। আরো জানলাম আমার অনুজ সৈয়দ মাসুকুর রহমান অতি গোপনে শিক্ষা, চিকিৎসায় অসহায়দের পাশে থাকছেন। এমন আরো অনেকে আছেন যাঁরা সেবার জগতে কিংবদন্তি। আরো অনেকের কথা জানি কিন্তু সময়মতো তাঁদের কথা বলার চেষ্টা করবো।
শেষ করছি সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ ও তাঁর সতীর্থরা সাহসের সাথে অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা সেবা দিয়ে শত বছরের দিকে এগুছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের অনুকরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আপনি যদি একজন অসহায় শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াই তাহলে শিক্ষার সরোবরে পদ্ম ফুটবেই। সমাজ হবে আলোকিত, সুবিধা বঞ্চিত কেউই হতাশায় ভুগবেনা। সৈয়দ মো. আবু দাউদ এর জ্ঞানের ছাত্র হওয়াতো আনন্দের গৌরবের। এখন আমি বা আমরা তাঁর ছাত্র হতে চাই।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিরাপদ পানি নিরাপদ জীবন
পরবর্তী নিবন্ধপলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ : প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা