সাদা বাঘিনীর ঘরে হলুদ-কালো শাবক

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনন্দের বান ডেকেছে। বেজায় খুশি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বিরল প্রজাতির সাদা বাঘের ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছে একটি মেয়ে শাবক। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকদিন পারও হয়ে গেছে। শাবকটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। গত ২৬ আগস্ট বাঘের বাচ্চাটি জন্ম নিলেও গতকালই তা প্রথম প্রকাশ করা হয়। শাবকটিকেও আনা হয় প্রকাশ্যে।
সাদা বাঘ শুভ্রার কোল জুড়ে আসা শাবকটি কিন্তু সাদা হয়নি, হয়েছে হলুদ-কালো ডোরাকাটা। বাঘের ঘরে আসা নতুন অতিথির নাম ঠিক করা হয়নি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ নিয়ে বাঘ পরিবারের সদস্য সংখ্যা উন্নীত হল ১০-এ। যা যে কোনো চিড়িয়াখানার জন্যই বেশ ভালো একটি সংখ্যা বলেও জানালেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিনে পরিদর্শন করে বাঘের ঘরে আসা নতুন অতিথিকে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভর কোলে দেখা যায়। শাবকটিকে কোলে বসিয়ে তিনি দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। কোল থেকে নামালেই ছোট্ট বাঘটি ছোট ছোট পায়ে ঘরের ভিতর হাঁটতে থাকে। গত ২৬ আগস্ট থেকে মানুষের আদরে-যত্নে একটু একটু করে বড় হওয়া বাঘের শাবকটি নিয়ে সকলের মাঝে উচ্ছ্বাস চলছে। বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ শুভ্রা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই আশা-নিরাশার দোলায় দুলছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাঘের শাবকটি কেমন হবে সেটি নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিল। সাদা বাঘের ঘরে হলুদ ডোরাকাটা বাঘের বাচ্চা জন্ম নিলেও কর্তৃপক্ষ বেশ খুশি হয়। বাঘের বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলে তৎপর হয়ে উঠে। বর্তমানে এটির দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। এর আগেও তিনি একটি বাঘের বাচ্চাকে লালন পালন করে বড় করে খাঁচায় দিয়েছেন। জো বাইডেন নামের ওই বাঘের বাচ্চাটি এখন ভালো আছে। বাঘের ওই বাচ্চাটিকে ছয় মাস ধরে লালন পালনের অভিজ্ঞতা সাদা বাঘের বাচ্চার ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগছে বলেও ডা. শুভ জানান।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আফ্রিকা থেকে আমদানি করা রাজ ও পরি দম্পতির মেয়ে হচ্ছে সাদা বাঘ শুভ্রা। পাঁচ বছরের মাথায় শুভ্রার ঘরে জন্ম নিল নতুন অতিথি। তিনি বলেন, ব্যাঘ্রশাবকটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। কারণ মায়ের আচরণ অনেক সময় হিংস্র হয়। শাবকটিকে আলাদাভাবে ফিল্টারে করে তিন ঘণ্টা পরপর ছাগলের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এভাবে বাঘের বাচ্চাটিকে ছয় মাস লালন পালন করে বাঁচিয়ে রাখা হবে। পরে দেয়া হবে খাঁচায়।
ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, বাঘের বাচ্চাটির ওজন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। ২৬ আগস্ট জন্ম নেয়ার বেশ কয়েকদিন পরও এটি বেশ দুর্বল ছিল। এটিকে বাঁচিয়ে রাখাই তখন অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছিল। এখন অবস্থা মোটামুটি ভালো। দুধও ঠিকঠাকভাবে খাচ্ছে। এটিকে ছয়মাস এভাবে বড় করার পর খাঁচায় দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ফয়’স লেক এলাকার ৬ একর জায়গা নিয়ে ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ ১০ দশমিক ২ একর। বাঘ, সিংহ, হায়েনা, জেব্রা, ময়ূর, কুমির, গয়াল, বানর, উল্লুক, ভালুক, চিত্রা ও সাম্বার হরিণ, চিল, শকুন, শজারু, উটপাখি, ইমু, শেয়াল, মেছোবাঘ, অজগর, গন্ধগোকুল, পায়রা, টার্কি, তিতিরসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি রয়েছে। এক সময় বাঘশূন্য হয়ে পড়া চিড়িয়াখানাটিতে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১০টি। এরমধ্যে একটি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। সিংহ রয়েছে ২টি। লকডাউনের পর প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা। সবকিছু মিলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় যথেষ্ট ভালো, গোছানো এবং পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাপানি গাড়ির দর উঠেছে মাত্র ৪ লাখ টাকা!
পরবর্তী নিবন্ধস্বস্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর