সংসারের জন্য বড় জরুরি হলো ধৈর্য, বিশ্বাস ও সমঝোতা

| মঙ্গলবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

প্রায় প্রতিনিয়ত ভাঙছে সংসার। দিন দিন বাড়ছে দাম্পত্য কলহের হার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যমতে, শুধু রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রীর কলহে প্রতি ঘণ্টায় একটিরও বেশি সংসার ভেঙে যাচ্ছে। মাসে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ৮৪৩টিরও বেশি পরিবার। এর মধ্যে বিচ্ছেদে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। হিসাব অনুযায়ী, তালাক নোটিশ প্রেরণকারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তবে বিয়ে বিচ্ছেদের হার আরো বেশি। কারণ অনেক মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবীসহ অনেক পরিবার রয়েছেন যাদের বিচ্ছেদ পারিবারিক সালিশের মাধ্যমে ঘটে থাকে। যার হিসেব সিটি করপোরেশনে বা কিংবা কোথাও দালিলিকভাবে লিপিবদ্ধ থাকে না। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘নগরে দিনে ভাঙছে ১৫ সংসার’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে নগরে দৈনিক ১৫টি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সালিসি আদালতে। যা ২০২০ সালে ছিল ১৩টি। ওই বছরও করোনার জন্য বেশিরভাগ সময় ঘরবন্দী থাকতে হয়েছে লোকজনকে। এর আগে ২০১৪ সালে দৈনিক ৮টি, ২০১৫ সালে ৯টি, ২০১৬ সালে ও ২০১৭ সালে ১০টি করে, ২০১৮ সালে ১১টি এবং ২০১৯ সালে ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। চলতি বছরের এখনো সাড়ে তিন মাস বাকি। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা আরো বাড়বে। করোনাকালে বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী থাকার সময় স্বামী-স্ত্রীর দোষ-ত্রুটি সহজেই একে অপরের চোখে পড়ছে। অন্য ব্যস্ততা না থাকায় পরষ্পরের দোষ-ত্রুটি ভুলে থাকার মাধ্যমে সমাঝোতার পথও এসময় সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে বেড়েছে বিচ্ছেদের ঘটনা। অবশ্য মানসিক চাপের পাশাপাশি করোনাকালে অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক চাপও সংসার ভাঙার জন্য দায়ী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীরা বর্তমানে ঝুঁকিতে আছেন। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতি হাজারে ১০.৮ শতাংশ নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন। এর বিপরীতে প্রতি হাজারে ১.৫ শতাংশ পুরুষ বিচ্ছেদ করেছেন। আর বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন তাদের সংখ্যা বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫। অন্য দিকে গ্রামাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার যেখানে হাজারে এক দশমিক ৩ শতাংশ আর শহরে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৮ জন। এক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করছেন।
বিচ্ছেদের আবেদন নিষ্পত্তি করেন এমন কর্মকর্তাদের মতে, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বামীর সন্দেহবাতিক মানসিকতা, পরকীয়া, স্বামী প্রবাসে থাকা, যৌতুক, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত। অন্য দিকে স্বামীর পক্ষে আবেদনের ক্ষেত্রে-স্বামীর ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছায় চলা, ফেসবুক আসক্তি, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি কম মনোযোগ দেয়া, ধর্মকর্মে উদাসীনতা, বন্ধ্যাত্বসহ বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ দম্পতি বিচ্ছেদে না গিয়ে পুনরায় সংসার করার বিষয়ে একমত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম্পত্য কলহ, নতুন-পুরনো সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের তারতম্য, স্ত্রীকে রেখে স্বামীর বিদেশ গমনসহ অনেক সময় কৌতূহলের কারণেও পর পুরুষ বা নারীর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পরকীয়ার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদসহ খুনের ঘটনা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, নারীর জন্য একতরফা আইন, চাকরি ও ইন্টারনেটের কারণে আধুনিক নারী স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করে থাকে। এছাড়াও ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু পুরুষের কাঁধে থাকার কারণে অনেক চাকরিজীবী নারী পুরুষকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চান না। এভাবে নারীর শৌখিন চাকরির কারণে অনেক সময় সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। বর্তমান সময়ে আকাশ সস্কৃতি, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের কারণে সমাজে পরকীয়া একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। নারীর এসব পরকীয়ার কারণে পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে পরকীয়ার বিষবাষ্প।
মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে সমাজে সবার মধ্যে সহনশীলতা কমে গেছে। সংসারের জন্য বড় জরুরি হলো ধৈর্য, বিশ্বাস ও সমঝোতা। পরস্পরকে বোঝার মানসিকতা হ্রাস পাচ্ছে বলে সংসার ভাঙছে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোটে সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬