শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর আহ্বানেও ক্লাসে ফিরছেন না শিক্ষার্থীরা

চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর আহ্বানের পরও ক্লাসে ফিরছেন না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তারা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ৮১ দিন ধরে চলে আসা অচলাবস্থার নিরসন হচ্ছে না।

২২ দফা দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখায় ২২ দফাকে এক দফায় রূপান্তর করেন তারা। চারুকলা ইনস্টিটিউট শহর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফা দাবি দেন তারা। এই দাবিতে গত ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে ওই দিন থেকে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম কার্যত অচল।

এর মাঝে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে গতকাল চট্টগ্রামে আসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রী দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করাকালীন চারুকলা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেখানে ছুটে যান। সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। বৈঠকে ৬০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, উপউপাচার্য বেনু কুমার দে, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন। পরে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সংস্কার করা, শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করা, খেলার মাঠ, আবাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর বিষয়েও আশ্বাস দিয়ে রোববার (আজ) থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী। পরে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে যান তারা। ৮১ দিন পর শিক্ষার্থীদের বন্ধ করে দেওয়া ফটক খুলে সেখানে প্রবেশ করে সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। সেখানেও শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণে আশ্বাস দেন।

শিক্ষামন্ত্রী চলে যাওয়ার পর উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। রোববার থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিধি ও শৃঙ্খলা মেনে চলবে। ভবিষ্যতে কী করা যায়, তা ভবিষ্যতের অর্থনীতি বিবেচনা করে এগোতে হবে। সব সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তা বলা হচ্ছে না। তবে সিদ্ধান্ত একটাই, একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন।

একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উল্লেখ করেন তিনি বলেন, পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সেখানে পাবলিক মানি জড়িত, সে বিষয়ে কথা বলছি। এই মুহূর্তে ফান্ডিংয়ের (তহবিল) প্রশ্নে। চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতি সরকারের নেই। বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারছি না। তবে অবকাঠামোগত সংস্কার করতে পারব। কিন্তু পুরো পরিবর্তন করার জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, রোববার থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। আর শিক্ষার্থীদের সমস্যা যেমন যাতায়াত ও আবাসন ব্যবস্থার সমস্যা নিরসন করা হবে। অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৌশলী পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীও থাকবে। ইনস্টিটিউটের সংস্কার করা হবে।

তবে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় থাকার পাশাপাশি আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ইনস্টিটিউট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিকালে মূল ফটক পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনও করেন।

আন্দোলনরত চারুকলার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. শহীদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমরাই গিয়েছিলাম। উনি ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার বিষয়ে ভিসি ম্যাডামকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আর মন্ত্রীউপমন্ত্রী আমাদের ক্লাসে ফিরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন। উনাদের অনুরোধের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমাদের দাবি তো পূরণ হচ্ছে না। সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না। আমরা কীভাবে ক্লাসে ফিরে যাব? মূল ফটক আমরা আবারো বন্ধ রেখেছি। দাবি পূরণে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগোলাগুলি ও আগুন নেই, আছে কেবল দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেল সম্প্রসারণ কাজ শুরু শীঘ্রই