ইমাম হোসেন (২৭)। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা মৃত আনোয়ার হোসেন ও মা রহিমা খাতুনের তিন ছেলের মধ্যে ইমাম মেজ। সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামে বেড়ে ওঠা ইমাম দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পার করছেন বন্দি জীবন। তার পায়ে শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ইমামের এই বন্দি অবস্থা দেখে অনেকে ভাবতে পারেন তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু এটা ভাবাটা ঠিক হবে না। কারণ মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও ইমামের প্রতি তার মায়ের আদর ভালোবাসার বিন্দু পরিমাণও কমতি নেই। মূলত ছেলেকে সবসময় চোখের কাছে রাখার জন্যই পায়ে শিকল দিয়ে তালা মেরে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন তিনি।
জানা যায়, ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে বৃদ্ধ মা এদিক-সেদিক ছুটে বেড়ান। চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে এভাবে ছেলের করুণ দৃশ্য সহ্য করাটা মা রহিমা খাতুনের জন্য ভীষণ কঠিন। তিনি ভাবেন, মায়ের চোখ বুজলে ছেলেটির কী হবে? কে তার দেখভাল করবে? উত্তরহীন এমন অসংখ্য প্রশ্নের চিন্তায় প্রতিনিয়ত কাঁদেন তিনি। রহিমা খাতুন বলেন, ইমাম হোসেন জন্ম থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল না। প্রথম প্রথম বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার-কবিরাজের চিকিৎসা করে কিছুটা উন্নতি হয়। চিকিৎসা করালে কিছুটা সুস্থ থাকে। কিন্তু টাকার অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। তিনি বলেন, ইমাম হোসেন প্রায় ৫ বছর বাড়বকুণ্ড মুকবুলার রহমান জুট মিলস্ লিমিটেডে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। হঠাৎ করে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরইমধ্যে পিতার মৃত্যু হয়। তার এক ভাই অটোরিকশা চালান, অন্য ভাই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। কোনমতে চলছে তাদের অভাবের সংসার।
সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন মিয়াজী বলেন, ইমাম প্রতিবন্ধী। কিন্তু উপজেলা থেকে শনাক্ত করে না দেয়ায় আমরা তাকে কোন সহযোগিতা করতে পারিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, ইমাম আমার ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে সে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতার বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমার কাছে এলে আমি সহযোগিতা করব। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।