ধাত্রী
কুঁকড়ে আছি মনোটোনাস গর্ভে
ধাত্রী আমায় মুক্ত কখন করবে?
শুনেছিলাম সূর্য দারুণ সুন্দর
শুনেছিলাম রাত্রি দারুণ সুন্দর
শুনেছিলাম তোমার ওমুখ সুন্দর
শুনেছিলাম বিশ্ব দারুণ সুন্দর;
বন্ধ চোখের রন্ধ্রে আলো ঝরবে
ধাত্রী আমায় মুক্ত কখন করবে?
জড়িয়ে আছি গর্ভে ফুলে ফুলে
মনোটোনাস রাত্রি ওঠে দুলে
উৎস থেকে আমায় ফেলো খুলে
মিথ্যা থেকে আমায় লহো তুলে
স্বপ্ন ছিঁড়ে দোলনা কাছে আনো
ধাত্রী আমার দুহাত ধরে টানো।
রচনা-১৯৮০
নার্স
সিরিঞ্জ ভরা দুঃখ দিলে হাসপাতালের শুভ্র নার্স
দুঃখ দেয়ার ভঙ্গিমা তোর
ভুলতে তবু পারবো না।
রক্তক্ষরণ বাঁধতে এসে রক্ত ঝরাও শুভ্র নার্স
রক্ত ঝরান ভঙ্গিমা তোর
ভুলতে তবু পারব না।
ঘুম তাড়ানী দৃষ্টি মেলে ঘুম পাড়ালে শুভ্র নার্স
ঘুম পাড়ানী ভঙ্গিমা তোর
ভুলতে তবু পারবো না।
বাঁচতে চাওয়ার প্রার্থনাকে উপড়ে নিলে শুভ্র নার্স
উপড়ে নেয়ার ভঙ্গিমা তোর
ভুলতে তবু পারবো না।
রচনা-১৯৮৪
শ্রী শ্যামাচরণ কবিরাজ ভবন ১
খসে পড়ে পুরানো পাথর চুন, লোহিত মরিচা
রান্নাঘরের জাগ, থালাবাটি পুরোনো কড়াই
এবড়ে থেবড়ো হয়।
স্থূল ভোঁতা কিছু পাথরের পতন শব্দ শুনে জেগে উঠি শেষ রাত্তিরে
কোন অভাগার মস্তক ফেটে ফের রক্ত গড়ালো
ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে ফিরে শুই।
বুনো মহিষের মতো ফুঁসতে ফুঁসতে গেলে লরী
বুকের পিঁজরা সহ কেঁপে ওঠে আমাদের পুরোনো ভবন।
কখনো স্বপ্নে দেখি, এ-ভবন ধসে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার
কেউ বেঁচে নেই শুধু আমি একা
দু’হাতে সরিয়ে ধস-পানকৌড়ির মতো ঘাড় তুলে চাইছি বেরুতে
এ-ভবনে কোন মেয়ে কখনোই ছাদে যায় নাকো
পাছে,
পাথরের অসভ্য গোঙানি জেগে ওঠে তেতলায়, অন্য কোনখানে।
দেয়ালে বাঁধুনি নেই, গাঁথুনির চুন আর সুরকীরা কবে গেছে ম’রে
পুরনো ইটের সাথে মৃত ইট আজো অছে দাঁড়িয়ে কী-করে
এ-এক বিস্ময়।
শুধু ভাঙ্গা-চোরা নিষিদ্ধ ছাদে
ক’টি নির্বাক ঘৃতকাঞ্চন
রোদ খায়, ঝড় বৃষ্টি খায়।
রচনা-১৯৮০