শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: অপরাজেয় কথাশিল্পী

| রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় কথাশিল্পী। মূলত ঔপন্যাসিক হলেও বেশ কটি ছোটগল্প এবং কিছু সংখ্যক প্রবন্ধও রচনা করেছেন তিনি। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষে বাংলা উপন্যাস তুমুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতি জগতে শরৎ সাহিত্যের প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক।
১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে শরৎচন্দ্রের জন্ম। তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ সালে এনট্রান্স পাস করেন। ফি জোগাড় করতে না-পারায় তিনি এফএ পরীক্ষায় বসতে পারেন নি। তাঁর গল্প লেখার শুরু সতেরো বছর বয়সে। প্রথম মুদ্রিত রচনা ‘মন্দির’ প্রকাশিত হয় ১৯০২ সালে। তবে ভারতী পত্রিকায় ছোটগল্প ‘বড় দিদি’ প্রকাশিত হলে লেখক ও পাঠক সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগে। ১৯১৩ সালে ‘বড় দিদি’ গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়। শরৎচন্দ্রের রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য সাবলিল ও মনোরম প্রকাশভঙ্গি তাতে ভাবাবেগ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে মানব চরিত্র ও সমাজ সম্পর্কে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি। আর সব কিছু ছাপিয়ে গভীর বেদনাবোধ পাঠকের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাঁর চরিত্রগুলো যেন পাঠকের অতি চেনা, চারপাশের কেউ একজন। অনাড়ম্বর ও প্রাঞ্জল ভাষা এবং চরিত্রের যথার্থ বিশ্লেষণ শরৎচন্দ্রকে অসামান্য জনপ্রিয়তা দিয়েছে। শরৎচন্দ্রের সমস্ত উপন্যাস ও ছোট গল্পগুলোকে প্রধানত পারিবারিক, সামাজিক ও মনস্তত্ত্বমূলক- এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করলেও তাঁর অধিকাংশ উপন্যাসের কেন্দ্রভূমিতে বিরাজমান রয়েছে বাঙালির সমাজ সম্পর্কে এক বিরাট জিজ্ঞাসা এবং বাঙালির মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ জীবনের রূপায়ণ। সাহিত্যকর্মে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র কুন্তলীন পুরস্কার ও জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। কখনো কখনো ‘অনিলা দেবী’ ছদ্মনামে লিখতেন। বাংলা ছাড়াও বহু ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে শরৎচন্দ্রের রচনা। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘দেবদাস’, ‘বড়দিদি’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পরিণীতা’, ‘মেজদিদি’, ‘গৃহদাহ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘পথের দাবি’, ‘শেষ প্রশ্ন’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘পল্লী সমাজ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। ‘দেবদাস’ বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধদুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই