লালন সাঁই : কিংবদন্তি সাধক

| শনিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

লালন সাঁই বাংলা লোক ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক বাউল সাধনার পথিকৃৎ ও চারণ কবি। ধর্মীয় প্রভাব বলয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ এবং মানবতারই পরম আরাধনা করেছেন তিনি। আজীবন তিনি সন্ধান করেছেন মানুষের, সহজ মানুষের। তাঁর গানে বার বার উদ্ভাসিত হয়েছে মানুষের মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার বাণী। আজ এই মরমী সাধকের ১২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
লালন সাঁইয়ের জন্ম ১৭৭৪ সালের ১৪ই অক্টোবর। তিনি ছিলেন সাধক, গায়ক, সুরকার, কবি। ছিলেন সামাজিক দায়বদ্ধ একজন মানুষ। জনশ্রুতি রয়েছে, লালন জন্মেছিলেন হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। শৈশবে বাবা-মাকে হারালে এক তীর্থযাত্রী দলের সাথে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে লালনকে পথে ফেলে অন্য যাত্রীরা চলে যায়। সিরাাজ সাঁই নামের এক মুসলমান সাধক তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তোলেন। সিরাজ সাঁইই লালনের প্রথম গুরু। স্বশিক্ষিত লালনের কবিত্বশক্তি, সমাজ-মনষ্কতা ও শিল্পচেতনা ছিল অসাধারণ। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু লালনের গানে ভাষা-সুর-অলংকারের এমন শিল্পমণ্ডিত রূপ ভুলিয়ে দেয় তিনি নিরক্ষর, গ্রাম্য কবি। তাঁর মধ্যে সুফী, বাউল ও বৈষ্ণব ধারার প্রভাব কার্যকর ছিল। লালন ছিলেন সকল সামপ্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে। তাঁর গানের মূল ভাবই হলো সত্য-শান্তি-সাম্য-সমপ্রীতি আর মানব কল্যাণ। ছিল তৎকালীন সময়ের মোল্লা-পুরোহিতদের অনুশাসনের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারাবদ্ধ সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেরণা। লালনের গান কেবল বাঙালির লোকসমাজ ও নাগরিক জীবনের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নেই। লালন বিশ্ব নাগরিক এবং মানবতার প্রতীক। লালনের প্রায় ২৫০০টি গান রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেন। লালনের জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায়। এখানেই রয়েছে লালনের আখড়া। এই আখড়াতেই ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালনের জীবনাবসান ঘটে। ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়া সারা বছরই মুখরিত থাকে লালন ভক্ত বাউলদের সাধনায়। তবে মৃত্যুদিবসে আখড়ায় মহা সমাবেশ হয়। এছাড়া প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় ৪ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত লালনের স্মৃতি বিজড়িত ছেউড়িয়ায় লালনের সমাধিপাশে ভক্তদের উৎসব হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন