‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান

হজের খুতবায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের আহ্বান

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৮ জুন, ২০২৩ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

হজ আনুষ্ঠানিকতার চূড়ান্ত একটি দিন আরাফাতের দিন। সারা বিশ্ব থেকে সৌদি আরবে সমবেত হওয়া ২০ লাখের বেশি মুসলমান হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁবুনগরি মিনা থেকে হাজির হন আরাফাত ময়দানে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিতে তাদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে বিদায় হজের স্মৃতি বিজড়িত এই ময়দান। সেখানে তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত থেকে হজের খুতবা শুনেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দিয়েছেন কাবা শরীফের ইমাম ও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ বিন সাঈদ। খুতবায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়। বিশ্বাসীদের সতর্ক করা হয়েছে সকল প্রকার বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণার বিরুদ্ধে। বলা হয়, এসব প্রচারণার উদ্দেশ্য মুসলিমদের বিভক্ত করা।

শেখ বিন সাঈদ বলেন, ইসলামী গ্রন্থগুলো ঐক্য, প্রেম, সম্প্রীতির আদেশকে নিশ্চিত করে। বিবাদ, বিভেদ ও মতভেদকে নিষিদ্ধ করে। নবী (সা.) তার অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ ও সহযোগিতামূলক হতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিবাদ নিষেধ করেছেন। এইভাবে, নবীর (সা.) মাধ্যমে আল্লাহ তার অনুসারীদের হৃদয় একত্রিত করেছেন। এ খুতবা ২০টির বেশি ভাষায় রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় বিশ্বময়। এই ২০ ভাষার মধ্যে রয়েছে বাংলাও। কোভিড মহামারীর ভয়াবহতা কাটিয়ে দুবছর পর কিছুটা বড় পরিসরে হজ হয়েছিল ২০২২ সালে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ মুসলমান। এবার হজ ফিরে গেছে মহামারীর আগের রূপে। সৌদি গেজেট জানিয়েছে, ২০১৯ সালের হজে অংশ নিয়েছিলেন ২৫ লাখ মুসলমান। এরপর এবারই সবচেয়ে বেশি মানুষ হজে অংশ নিচ্ছেন। এবার যারা হজ করছেন, তারা ১৬০টি দেশের বাসিন্দা। ১ লাখ ২২ হাজার বাংলাদেশিও আছেন তাদের মধ্যে।

নাইজেরিয়া থেকে হজ করতে আসা মোহাম্মেদ হামাদ বলেন, স্রষ্টার কাছাকাছি আসার এ অনুভূতি অসাধারণ। তিনি সর্বশক্তিমান, কল্যাণ, শান্তি আর সমৃদ্ধির জন্য তার কাছে সরাসরি ফরিয়াদ জানানোর এ এক অনন্য সুযোগ। আফগানিস্তান থেকে মক্কায় হাজির হওয়া মোহাম্মদ নুমান বলেন, আমাকে এবার হজে আসার তৌফিক দিয়েছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের সবার হজ আল্লাহ কবুল করে নিন। এ বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে রোববার। পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরীফ তাওয়াফ করে রাতে এশার নামাজের পর সবাই জড়ো হতে শুরু করেন ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়। সোমবার সারা দিন ও রাত তারা সেখানে কাটান ইবাদতবন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামাতে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য মঙ্গলবার ভোরের আগেই তারা সমবেত হতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে।

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানেই থাকেন। যার যার মত সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত করেন; শুনেন হজের খুতবা।

আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকা হজের চারটি স্তম্ভের একটি। এটি হজের চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা। এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।

এদিন সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হন। মুজদালিফা আরাফাত এবং মিনার মধ্যবর্তী একটি ঐতিহাসিক স্থান। মঙ্গলবার দিবাগত রাত হজযাত্রীরা মুজদালিফায় কাটাবেন এবং নুড়ি পাথর সংগ্রহ করবেন। পরে তারা মিনার জামারাতে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। পরে হজযাত্রীরা তাওয়াফ আলইফাদাহ করার জন্য কাবা শরিফে যাবেন। এই তাওয়াফ জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে যে কোনো সময় করতে পারেন হজযাত্রীরা। তাওয়াফ আলইফাদাহ শেষে হজযাত্রীরা ইহরাম ভেঙে ফেলবেন। কাবা শরিফ থেকে হজের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে যাবেন তারা।

হজের মৌসুম এবার পড়েছে গরমের মধ্যে। সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা এড়াতে সবাইকে ছাতা ব্যবহার করতে এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে ছিলেন ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদুল আজহা ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল আজহা কাল