রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে

| শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মায়ানমার থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থান পাঁচ বছর পূর্ণ হলো গত ২৫ আগস্ট। গত পাঁচ বছরে একজনও প্রত্যাবাসন হয়নি। এত বছরেও রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ মায়ানমার দেখাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ক্রমশই রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, মাদক দ্রব্য, অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদি লেগেই আছে। কয়েকবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে এবং মিয়ানমারের টালবাহানায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অথচ এখন তাদের ফিরে যাওয়ার দরকার। যখন প্রয়োজন হয়েছিল তখন আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তার অর্থ এই নয় যে তাদের আজীবন ধরে রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা পৃথিবী নিজেই এক বিরাট সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মুহূর্ত পাড়ি দিচ্ছে এই মুহূর্তে। বছর বছর রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের সংখ্যাও। ফলে যত বছর পার হবে তত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। যা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করবে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেকবার উঠছে। কিন্তু কার্যকর কোনো কিছু আসেনি।’
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাখাইনের মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গাদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পাঁচ বছর আগে ২৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেনা অভিযানের পরের পাঁচ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই আছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। এখন পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশ কি না-এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হতাশ হলে তো চলবে না। কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বছরের মধ্যে ছোট পরিসরে হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।’
গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে কঙবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখ ১৮ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এ পরিস্থিতিতে গত ৫ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও দেড় লাখের উপরে। প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ সরকার প্রথমে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, কূটনৈতিক নানা কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি আজও।
দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রেরিত খবরে জানা যায়, রোহিঙ্গারা নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদের নানা অপরাধের কথা তুলে ধরে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৫ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ মাত্রারিক্ত হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮টি। উক্ত মামলায় আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ২২৬ জন। মামলাগুলোর মধ্যে অস্ত্র মামলা ১৮৫টি, মাদক মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি, ধর্ষণ ৮৮টি, হত্যা ১১৫টি, অপহরণ ও মুক্তিপণ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩৯টি। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য।
ক্রমশই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সমস্যার তালিকা। আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানে জটিলতা বাড়ছে। কিন্তু এদের ভবিষ্যত কী হবে তার কোনো সুরাহা হয়নি। এখনো কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুটি এভাবেই পড়ে থাকছে অমীমাংসিত ইস্যু হয়ে। যেখানে রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার কথা, সেখানে তাদের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেই উখিয়া, টেকনাফ এবং ভাসানচর থেকেও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের উপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার চাপ আন্তর্জাতিকভাবে অব্যাহত রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধখ্রিপূ. ৫৫১ চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের জন্ম।