রেকর্ড গড়া জয়ে সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

নানা হিসেব নিকেষ। ভয়, উৎকন্ঠা, আলোচনা, সমালোচনা। আর তার সাথে ভর করেছিল অদৃশ্য চাপ। সব মিলিয়ে তুচ্ছ পাপুয়া নিউগিনিও কেমন যেন আস্ফালন করছিল। তবে সবকিছুকে একেবারে ঝড়ের বেগে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সাকিবের দুর্দান্ত অল রাউন্ড নৈপুণ্য, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড গড়া ব্যাটিং। আর দল হিসেবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাপুয়া নিউগিনিকে স্রেফ উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের রেকর্ড গড়া জয় নিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিল টাইগাররা। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টা ৮৪ রানের। আগের সর্বোচ্চ জয়টি ছিল ৭১ রানের। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭১ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ কেবল মাত্র ৩ রানে জিতলেই সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত হয়ে যেতো। সেখানে বাংলাদেশ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। আর বিশ্বকাপে সবচাইতে বড় জয় ছিল ৫৪ রানে। যা ২০১৬ সালে ওমানের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপের শুরুতেই বিপদে পড়া বাংলাদেশ ওমানকে হারিয়ে বিপদ কিছুটা কমিয়েছিল। গতকাল তিন রানের জয় হলেই চলত। কিন্তু আগের দুই ম্যাচের ক্ষোভ যেন খর্বশক্তির পাপুয়া নিউগিনির উপর দিয়েই ঝাড়ল সাকিব-রিয়াদরা। আর তাতেই সব সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে বাংলাদেশ। সে সাথে দলের মাঝে যেন স্বস্তি ফিরল। অথচ ম্যাচের শুরুটা বড়ই বিবর্ণ বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা নাঈম এবারে ফিরলেন রানের খাতা খোলার আগেই। তিন নম্বরে নেমে সাকিব চেষ্টা করেছেন রানের চাকা ঘুরাতে। কিন্তু কেমন যেন ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না লিটন দাশ। যদিও দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবের সাথে মিলে ৫০ রান যোগ করেছেন লিটন। সেখানে এই ওপেনারের অবদান ২৩ বলে ২৯। আবারো ব্যর্থ হলেন মুশফিক। ফিরলেন ৫ রান করে। তবে সাকিবের সাথে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যোগ দিলে পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। কিন্তু আগের ম্যাচের মত এই ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারলেন না সাকিব। আগের ম্যাচে ২৯ বলে ৪২ রান করা সাকিব এই ম্যাচে ফিরলেন ৩৭ বলে ৪৬ রান করে। কোন চার না মারলেও মেরেছেন অর্ধ ডজন ছক্কা। তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছিল যেন খাপ খোলা তরবারি। আফিফকে নিয়ে দ্রুততার সাথে ৪৩ রান যোগ করেন অধিনায়ক। প্রথম এবং শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের রানের চিত্রটা পুরো বিপরীত। প্রথম দশ ওভারে যেখানে রান ছিল ৭১ সেখানে শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ১১০ রান। মাহমুদউল্লাহ তার হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ২৭ বলে ৩টি চার সমান সংখ্যক ছক্কার সাহায্যে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পরের বলেই ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফের ১৪ বলে ২১ এবং শেষ দিকে সাইফউদ্দিনের মাত্র ৬ বলে ১৯ রানে ভর করে ১৮১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
১৮২ রানের বিশাল টার্গেট। আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খায় পিএনজি। সাইফউদ্দিনের ধাক্কায় ফিরেন সিয়াকা। এরপর আঘাত হানেন তাসকিন। তার শিকার আসাদ ভালা। ১৩ রানে দুই ওপেনার নেই। এরপর সাকিবের স্পিন বিষে নীল পাপুয়া নিউগিনি। বিশ্বসেরা এই স্পিনারকে খেলতে গিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা পিএনজি ব্যাটসম্যানদের। টানা বল করে আমিনি, বাউ, আটাই এবং হিরি হিরিকে ফিরিয়ে পিএনজির কোমর ভেঙে দেন। ২৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসা পিএনজির সামনে তখন অর্ধশত রান করতে পারবে কিনা সে শংকা উকি দিচ্ছিল। ঠিক সে অবস্থায় বুক চিতিয়ে লড়তে থাকেন ডোরিগা। তার হঠাৎ মারমুখি ভূমিকা পিএনজিকে শতরানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত হতে দেননি তাসকিন, সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসানরা। ডোরিগা ৩৪ বলে ৪৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ১১ রান করেছেন চপার। এদুজন ছাড়া পাপুয়া নিউগিনির আর কোন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৩ বল বাকি থাকতে ৯৭ রানে অল আউট হয় পাপুয়া নিউগিনি। আর বাংলাদেশ পায় ৮৪ রানের বিশাল জয়। সাকিব ৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। এটি তার তৃতীয় সেরা বোলিং। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। যদিও তার সেরা বোলিং ২০ রানে ৫ উইকেট। সে সুবাধে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যাচ সেরাও হলেন সাকিব। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন এবং তাসকিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাহাজের বাড়তি ভাড়ার চাপে পোশাক খাত আমেরিকা
পরবর্তী নিবন্ধছেলে হত্যার বিচার চাওয়ায় পিতাকে হত্যা