যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় আমেরিকান কর্নারের বিপুল তথ্যকে কাজে লাগাতে হবে

অ্যালাবামায় অধ্যয়নরত চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী অংকন

প্রবীর বড়ুয়া | বুধবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:২৬ অপরাহ্ণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অভ সাউথ অ্যালাবামায় তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া করছেন চট্টগ্রামের ছেলে অংকন বাবলা সুশীল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া শুরু করেন এ বছরের স্প্রিং সেমিস্টারে। তিনি বিশেষভাবে আগ্রহী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তড়িৎ প্রকৌশলের মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধানে।
তার কাছ থেকে জানা যাক যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
প্রশ্ন: এডুকেশন-ইউএসএ বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনি প্রথম কীভাবে জানতে পারেন?
অংকন: স্নাতক শিক্ষার্থী থাকাকালে আমি এডুকেশন-ইউএসএ’র ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিষয়ক আলোচনায় যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে থেকেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতে আগ্রহী সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের সহায়তা সেবা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি।

প্রশ্ন: এডুকেশন-ইউএসএ’র পরামর্শগ্রহীতা হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
অংকন: সফলভাবে আমার স্নাতক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর আমি প্রকৌশল খাতে কাজ শুরু করি যেখানে আমি দ্রুতই অনুধাবন করি যে আমার আগ্রহের কাজের জন্য আমার শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার্থে আবেদনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অনুসন্ধান করে আমি চট্টগ্রামে আমেরিকান কর্নারে এডুকেশন-ইউএসএ’র নিকটতম পরামর্শ কেন্দ্রের খোঁজ পাই যেখানে আমি আমার প্রয়োজনীয় যথাযথ তথ্য ও উপকরণ পেয়েছি।
আমেরিকান কর্নারে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই এডুকেশন-ইউএসএ’র পরামর্শক মিজ আসমা আলম আমাকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমার সমস্ত জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছেন। কয়েকদিন পরই আমি সেন্টারের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে বের করা, GRE/IELTS-এর প্রস্তুতি, ভর্তির জন্য রচনা লেখার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু কার্যক্রমে যোগ দিই। যখনই আমার মনে কোনো প্রশ্ন এসেছে কিংবা আমার উদ্দেশ্য বিষয়ক বিবৃতির (statement of purpose) খসড়া লিখতে গিয়ে অথবা কোনো অধ্যাপককে ইমেইল করতে গিয়ে আটকে গেছি তখনই আমি পরামর্শকের সহায়তা পেয়েছি।

প্রশ্ন: আপনার শিক্ষার বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছাতে এডুকেশন-ইউএসএ থেকে আপনি কী কী তথ্য ও সহায়ক উপকরণ পেয়েছেন?
অংকন: প্রথমত, পরামর্শ কেন্দ্রের গ্রন্থাগারে আছে GRE, TOEFL ও IELTS’র প্রচুর বইপত্র ও বিনামূল্যে ওয়াইফাই সহ কম্পিউটার যা আমাকে কলেজ খুঁজে বের করতে এবং আমার আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। দ্বিতীয়ত, সেন্টারের সাপ্তাহিক কার্যক্রমগুলো অনেক উপকারি ও মনোগ্রাহী ছিল যেখানে আবেদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতো। পরিশেষে, সেন্টার কর্তৃক বিনামূল্যে একটি ভার্চুয়াল কলেজ মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে ভার্চুয়াল বুথের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

প্রশ্ন: বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে কী কী সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে?
ইউনিভার্সিটি অভ সাউথ অ্যালাবামায় একটি পুরো বিভাগই রয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য। অ্যালাবামার মোবাইল সিটিতে পৌঁছানোর অল্প সময়ের মধ্যেই বিভাগটি আমাদেরকে স্থানীয় একজন সমাজকর্মীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যিনি আক্ষরিক অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের জীবনে মানিয়ে নিতে প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের সহায়তা করেছেন। এই বিভাগ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক যত্নশীল ও আন্তরিক।

প্রশ্ন: আপনার অভিজ্ঞার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনন্য সুফলগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
অংকন: আমার অভিজ্ঞতা যতদূর সেই অনুযায়ী নিচের তিনটি সুফলই আমার কাছে প্রধান: ক) মূল বিষয় (major) নির্বাচনে নমনীয়তা, খ) হাতে-কলমে শিক্ষানবিশি এবং পেশাগ্রহণ পরিকল্পনায় সহায়তার মাধ্যমে পেশাগত উন্নয়নে ব্যাপক গুরুত্ব, গ) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা ও সহায়তা।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি কীভাবে আপনার পেশাগত লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষাকে সহায়তা করেছে?
অংকন: এটা সুবিদিত যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৌশল ডিগ্রি নেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে সফল পেশাজীবন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক দক্ষতা ও জ্ঞান লাভ করে। তাছাড়া, শক্তিশালী যোগাযোগ, দলীয় কাজ, বিশ্লেষণী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মতো বিভিন্ন পেশাগত দক্ষতা (soft skills) জোরদার হওয়ার ফলে সেটা আমাকে আমার পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের পথে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে ও তার জন্য প্রস্তত করে তুলবে।

প্রশ্ন: আপনার ক্যাম্পাসে কি কোনো বাংলাদেশী বা দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীর সংস্থা বা জনগোষ্ঠী আছে যার সাথে আপনি সম্পৃক্ত আছেন?
অংকন: হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে আমাদের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন আছে। আমি সৌভাগ্যবান যে আমি তাদের সাথে সম্পৃক্ত এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য নির্বাচিত হয়েছি।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা কী হবে?
অংকন: প্রথমত, আমি যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে এডুকেশন-ইউএসএ’র নিকটতম কেন্দ্রের (আমেরিকান সেন্টার, ইএমকে সেন্টার, চট্টগ্রাম ও খুলনায় আমেরিকান কর্নার সেন্টার) সাথে যোগাযোগের জন্য উৎসাহিত করব। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তারা আপনাকে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। প্রমিত পরীক্ষা, রচনা লেখা ও কলেজ অনুসন্ধানে আপনার প্রস্তুতিতে সহায়তার জন্য তাদের দেয়া বিনামূল্যের বিপুল তথ্যোপকরণের সুবিধাকে কাজে লাগান।
পরিশেষে, আপনার একই গবেষণার আগ্রহের কথা জানিয়ে যত বেশি সংখ্যক অধ্যাপককে সম্ভব ইমেইল করুন কারণ আপনি কখনই জানেন না কে বা কারা তাদের বিভাগে কোন শিক্ষার্থীকে পূর্ণ অর্থায়নের জন্য সাগ্রহে খুঁজছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাভার্ডভ্যান-ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধকোয়ারেন্টিন ছাড়াই যাওয়া যাবে ব্যাংকক