ম্যাজিক দেখিয়ে প্রিমিয়ারে চ্যাম্পিয়ন উদয়ন সংঘ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

পাঁচ গোল খেয়ে যে দলটি লিগ শুরু করেছিল সে দলটিই কিনা শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন। একেবারে ম্যাজিক দেখিয়েই প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপা ধরে রেখেছে মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। একতা, শৃংখলা আর দৃঢ় মনোবল থাকলে একটি দল কিভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত হলেও মনোবল হারায়নি দলটি। যার ফলে সবাইকে টপকে টানা দ্বিতীয়বারের মত লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে মাদারবাড়ির দলটি। চট্টগ্রামের ফুটবলে সেই আবাহনী আর মোহামেডান যুগের পর মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ প্রথম দল যারা টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতল। আর এবারের শিরোপাটিতো তাদের জন্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তবে অপ্রত্যাশিত বললে বোধহয় ভুল হবে। কারণ প্রথম ম্যাচের ভুল ত্রুটি শুধরে কিভাবে একটি শক্তিশালী দলে পরিণত হওয়া যায় সেটাই যেন দেখিয়ে দিল উদয়ন সংঘ। যার ফল দলটি পেয়েছে হাতেনাতে। বাঘা বাঘা সব প্রতিপক্ষকে টপকে লিগ শিরোপার মালিক এখন মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। গতকাল লিগের শেষ ম্যাচে সমীকরণটা দাঁড়িয়েছিল এক রকম ত্রিমুখী। যেহেতু কিষোয়ান স্পোর্টস, সিটি কর্পোরেশন একাদশ এবং মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ তিন দলেরই পয়েন্ট সমান ১৬। তখন শেষ ম্যাচটি হয়ে উঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচে যদি উদয়ন সংঘ হারে তাহলে তাহলে তিন দলেল পয়েন্ট হয়ে যেতো সমান। তখন লিগ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লটারির মাধ্যমে লিগ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করবে। তবে মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ সে সুযোগ দেয়নি। শেষ ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাথে ১১ গোলে ড্র করে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জিতে নেয় উদয়ন সংঘ। আর সিটি কর্পোরেশন একাদশ এবং কিষোয়ান স্পোর্টসের পয়েন্ট সমান হওয়ায় হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় সিটি কর্পোরেশন একাদশ রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস। আক্রমন আর পাল্টা আক্রমণ করেই চলছিল খেলা। তবে প্রথমেই গোল আদায় করে নেয় ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তাও খেলার কেবল ৮ মিনিটে। মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে দারুন এক কোনাকোনি শটে বল জালে পাঠিয়ে ব্রাদার্স শিবিরকে উল্লাসে মাতান রুম্মন। গোল হজম করে দুর্দন্ত ভাবে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে উদয়ন। শেষ পর্যন্ত খেলার ৩২ মিনিটে সমতা ফেরায় উদয়ন। ডান প্রান্ত থেকে জমিরের কর্নার। উড়ে আসা বলটি নিয়ে ব্রাদার্স ডি বঙে জটলা সৃষ্টি হয়। আর সে জটলা থেকে টোকা দিয়ে গোল করেন আশিক। খেলায় ফিরে ১১ গোলে সমতা। প্রথমার্ধে আর গোল করতে পারেনি কোন দলই। দ্বিতীয়ার্ধে আরো আক্রণমাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে দু’দল। এই অর্ধের ২৩ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো উদয়ন। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন সৈনিক। কিন্তু তার শট অসাধারণ দক্ষতায় কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ব্রাদার্স গোল রক্ষক। তবে ৪০ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাদার্সও। উদয়ন গোল রক্ষকের দুর্বল শট ধরে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন জয়। কিন্তু তার সে শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে লেগে। এরপর পররপই ব্রাদার্সের একটি পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেন রেফারী। কিন্তু ৪২ মিনিটে নিজেদের ডি বক্সে ব্রাদার্সেল এক রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগলে রেফারী পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ব্রাদার্সের খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ করলেও কোন লাভ হয়নি। কিন্তু জোবায়েরের নেওয়া পেনাল্টি ফিরিয়ে দেন ব্রাদার্স গোল রক্ষক। ফিরতি বলে আবার শট নিয়েছিলেন রিমন। সে শট ফিরে সাইডবারে লেগে। ফলে সে যাত্রায় বেচে যায় ব্রাদার্স। এরপর আর কোন দলই গোল করতে পারেনি। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সাথে সাথেই শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। টানা দ্বিতীয়বার লিগ শিরোপা জয়ের আনন্দে তখন বাধন হারা ক্লাবটির খেলোয়াড় কর্মকর্তারা। সেরা দল গড়েও তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কিষোয়ান স্পোর্টসকে। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের রুম্মন।

খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ... নাছির উদ্দিন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিঃ এর পরিচালক নিজাম উদ্দিন মাহমুদ হোসাইন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিজেকেএস সহসভাপতি এডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, মোঃ হাফিজুর রহমান, এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, দিদারুল আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মশিউর রহমান চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর, ফুটবল সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, সাইফ পাওয়ারটেক লিঃ এর সিনিয়র ম্যানেজার রেজাউল করিম, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত পাবলু, যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন জাহেদ সহ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

পরে অতিথিবৃন্দ চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স আপ দলের খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আর এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএতদিনে রেফারির মান টের পেলেন খোদ রেফারি সমিতির সভাপতি
পরবর্তী নিবন্ধরোজিনার সুখবরের বছর