মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | সোমবার , ১১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

সৎ সুন্দর জীবনযাপনের জন্য মানব জীবনে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। রোজা মানুষের রিপুর তাড়না থেকে মুক্ত হওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। এক মাস ট্রেনিং কোর্সের মাধ্যমে পরবর্তী এগারো মাস শুদ্ধ জীবন চলার গাইড লাইন অর্জিত হয়। এই প্রশিক্ষণ কোনো সাধারণ প্রশিক্ষণ নয়। কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ব্যক্তিকে নয়, আমার মধ্যে আমির প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষক স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক। এ প্রশিক্ষণের মুখ্য সিলেবাস আল্লাহভীতি।
সিয়াম সাধনাকারীর সামনে অনেক ধরনের হালাল খাবার রয়েছে। দুনিয়ার কোনো শক্তিই খাবার গ্রহণে বাধা দেওয়ার সামর্থ রাখে না। রোজা রাখার কারণে শরীর খাবার গ্রহণের জন্য ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর, তখন কুপ্রবৃত্তি তাকে খাবার গ্রহণ করার জন্য অবিরাম প্ররোচনা দিতে থাকে। তারপরও মহান আল্লাহর ভয়ে সে খাবার স্পর্শ করে না। তার জন্য নেই মুমিনের কোনো ধরনের ক্ষোভ বা আক্ষেপ। মুমিনরা রোজা রেখে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। কারণ সে জানে এটি তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের অন্তরাত্মা কুটিল ও জটিলতা এবং আল্লাহ ভীতির দোটানায় বিদ্যমান। আমরা দেখতে পাই, ইচ্ছাশক্তি যেদিকে প্রবল হয় সেটাই জয়ী হয়। সিয়াম সাধনা মানুষের তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ইচ্ছাশক্তিকে প্রবল করে এবং ষড়রিপুর সকল মন্দ দিককে পরাজিত করে। মনে রাখতে হবে, সাপ, বাঘ সিংহকে ভয় করার নাম তাকওয়া নয়, আল্লাহ আমাকে সর্বাবস্থায় দেখছেন, তার সামনে কীভাবে পাপাচার করবো এটি হলো তাকওয়া। মানুষ কী বলবে বা কী মনে করবে, তার ভয়ে অধিকাংশ মানুষ পাপ করে না। এটি তাকওয়া নয়, মহান আল্লাহ সৃষ্টির স্রষ্টা তাঁর সামনে কীভাবে পাপাচার করবো এবং মন্দ লোক হিসেবে তাঁর সামনে শেষ দিবসে কীভাবে হাজির হবো এই চিন্তার নাম তাকওয়া। হযরত উমর (রা.) উবাই ইবনে কা’ব এর নিকট তাকওয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতে চাইলেন, আপনি কী কণ্টকাকীর্ণ সরুপথ কখনো অতিক্রম করেছেন? আমিরুল মোমেনিন জানালেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কা’ব বললেন, তখন সেপথ আপনি কীভাবে অতিক্রম করেন ? উত্তরে তিনি জানালেন, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এমনভাবে অতিক্রম করি, যেন কাটার আঁচড় আমার দেহ ও পোশাকের সাথে না লাগে। উবাই (রাঃ) বললেন, এভাবে সতর্কতার সাথে জীবন চলার নামই তাক্‌ওয়া। মানুষকে অপরাধমুক্ত রাখতে ইসলামে দুই ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি শাস্তিমূলক অন্যটি তাকওয়া। দুই
ব্যবস্থাই ভয়ের। একটি আইন কর্তৃক শাস্তির ভয়, অন্যটি আল্লাহর ভয় ‘তাকওয়া’। শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। চুরি করলে হাত কাটা, ব্যভিচার, মদপানের জন্য বেত্রাঘাত, হত্যার বদলা হত্যা এবং দেশীয় নানা আইন দ্বারা পুরো সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে অসহায়, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ম দৃষ্টি যেখানে অক্ষম, সেখানে একজন ব্যক্তিকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারে তাকওয়া। যার মনে মহান আল্লাহর তাকওয়া বা ভয় নেই, তার বিরুদ্ধে আধুনিক যুগের সব বাহিনী ও শক্তি নিয়োগ করেও তাকে অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। সুযোগ পেলেই সে অপরাধে লিপ্ত হবে। তাকওয়াহীন প্রহরী, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে দেখি আমাদের সমাজে।
তাকওয়াহীন মানুষ দ্বারা অপরাধদমন সংস্থা গঠন করলে কখনো শত চেষ্টায় অপরাধ দমন সম্ভব হবে না। অপরাধ দমন সংস্থার অপরাধ দমন করতে আরো অপরাধ দমন সংস্থার প্রয়োজন হবে। একে একে অপরাধ দমন সংস্থাই বৃদ্ধি পাবে। তাতে অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধিই পাবে, কমবে না। তাকওয়াই হচ্ছে অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার বড় মাধ্যম। তাকওয়া নিজের জন্য নিজেই প্রহরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবছরে যোগ হচ্ছে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাই-সিটি গেট মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটারে শতাধিক অবৈধ বিলবোর্ড