মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | মঙ্গলবার , ৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস রমজানুল মোবারকে আল্লাহ পাক আমাদের অসংখ্য নেয়ামত প্রদান করেছেন। সালাতুত তারাবিহ এক মহাপুণ্যময় ইবাদত। প্রত্যেক বিবেকবান বালেগ মুসলমানদের ওপর তারাবিহর নামাজ সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ, যা বর্জন করা অবৈধ (সূত্র : দুররুল মোখতার ২য় খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা)। তারাবিহর জামাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের জামাত সকলে ছেড়ে দেওয়া মন্দ কাজ। কয়েকজন মিলে জামাত আদায় করলে চলবে, কিন্তু যারা একাকী পড়বে তারা ফজিলত হতে বঞ্চিত হবে। (হেদায়া : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭০)
রাসুল (সা.) সুন্নাতের ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি হাদিসে পাকে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবেসেছে, সে আমাকে ভালোবেসেছে, যে আমাকে ভালোবেসেছে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে (তিরমিজি শরীফ)। প্রিয় নবী (সা.) তারাবিহকে পছন্দ করতেন। এ ব্যাপারে তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে রাত জেগে পুণ্য অর্জন করে, তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় (সূত্র : ফয়জানে রমজান, পৃষ্ঠা ২২৭)। মুহাম্মদ (সা.) রমজানে তিন রাত (২৩, ২৫ ও ২৭) তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়েছেন। তারপর যখন তিনি সাহাবিদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করলেন, তখন মসজিদে এলেন না। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) মনে করলেন তিনি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন তারা তার দরজায় আওয়াজ দিতে লাগলেন। তিনি তাদের বললেন, আল্লাহ তোমাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় বরকত দিন। আমি এই আশংকায় বাইরে যাইনি যে, কি জানি এ নামাজ যেন তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে না যায় এবং সবসময় তোমরা তা পালন করতে পারবে না। এ জন্য এ নামাজ তোমরা ঘরেই পড়তে থাক (বোখারী শরীফ)।
প্রিয় নবী (সা.) উম্মতের কষ্টের কথা চিন্তা করে তারাবিহর জামাত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারপর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) তাঁর খিলাফতকালে রমজানের এক রাতে মসজিদে দেখতে পান সকলে পৃথক পৃথকভাবে তারাবিহর নামাজ আদায় করছেন। আমিরুল মোমেনিন তা দেখে বললেন, আমি মনে করি সকলকে এক ইমামের পেছনে একত্রিত করে দেওয়াই উত্তম এবং তিনি হযরত উবাই ইবনে কা’বকে (রা.) ইমাম করে দিলেন।
অতঃপর দ্বিতীয় রাতে হযরত ওমর জামাত সহকারে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে দেখে আনন্দিত হয়ে বললেন, নিঈমাতিল বিদআতু হাজেহী। অর্থাৎ এটা একটা উত্তম বিদআত’ (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১১৫)। তারাবিহর নামাজ আমাদের ইমাম আবু হানিফার (রা.) মাজাহাব মতে ২০ রাকাত। হযরত ফারুকে আজমের (রা.) শাসনামলে ২০ রাকাত পড়া হত। (বায়হাকি, ৪র্থ খণ্ড, ৬১ পৃষ্ঠা)।
তারাবিহর নামাজ ২০ রাকাত হওয়ার কারণ এই যে, মুসলমানগণ প্রত্যেকদিন পাঁচ ওয়াক্ত মিলে বিশ রাকাত ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। ১৭ রাকাত ফরজ এবং ৩ রাকাত ওয়াজিব (বিতর)। রমজান মাসে এ বিশেষ পূর্ণতার জন্য ২০ রাকাত অতিরিক্ত পড়া হয়। যাতে করে এ মোবারক মাসে কোনোভাবে ওই সকল রাকাত অসম্পূর্ণও হয় তাহলে এর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এ মাসে ইবাদত পরিপূর্ণ হওয়া অবশ্যক। (সূত্র : আছরারুল আহকাম, মাওলানা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেতনের দাবিতে শ্রমিকদের দিনভর সড়ক অবরোধ
পরবর্তী নিবন্ধচাক্তাই খালের বেশিরভাগ অংশ এখনো ভরাট