মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মুসলমানদের উপর নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলে যাকাত আদায় করা ফরজ। এই ফরজ আদায় করার কোনো সময় বা মাস নির্ধারিত নেই। সম্পদের মালিকানা চন্দ্র বছর পূর্ণ হলেই যাকাতের সম্পদ নির্ধারণ করতে হবে। যত সম্ভব দ্রুত যাকাত আদায় করতে হবে। তবে রমজান মাসে যাকাত আদায় অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। যাকাত যথাযথ সংগ্রহ ও বন্টন ব্যবস্থার কথা কোরআন হাদিসে উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, হে নবী তাদের সম্পদ হতে যাকাত আদায় করে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করুন (সূরা তাওবা)।

পবিত্র কোরআনে আরো ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে রয়েছে বঞ্চিতদের হক (সূরা জারিয়াত, ৫১৪১৯)। এসব কোরআনের আয়াতের আলোকে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানের জন্য যাকাতের বিধান জারি করেছেন এবং যাকাত বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। রাসুল (সা.) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবলকে (রা.) ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বললেন, তুমি আহলে কিতাবীদের নিকট যাচ্ছ, তাদের তুমি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। তারা তা মানলে তাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলবে। তা মানলে বলবে, মহান আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। তারা তা মেনে নিলে, তাদের সম্পদের উত্তম অংশগ্রহণ করার মধ্যে সতর্কতা অবলম্বন করবে। আর মজলুমের ফরিয়াদকে অবশ্যই ভয় করবে। কারণ মজলুম ও আল্লাহ পাকের মাঝখানে কোনো পর্দা নেই (তাবরানী ও বায়হাকী)। মহানবী (সা.) কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের জন্য যাকাত আদায় করার লোক নিয়োগ করতেন। তারা নিজ এলাকা হতে যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন করতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলেও এ পদ্ধতি কার্যকর ছিল। এতে আত্মস্থ হয় যে, যাকাত আদায় করে নিতে হয় এবং সঠিকভাবে বণ্টন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তখনকার সময়কালে শাসকগণ যাকাত দাতার উপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকতেন না। খোলফায়ে রাশেদীনের পর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। সাথে সাথে সে নিয়ম পূর্ণরূপে বজায় রাখা সম্ভব না হলেও দুনিয়ার কোটি কোটি মুসলমান আল্লাহর নির্দেশ পালন করে প্রতি বছর ব্যক্তিগত উদ্যাগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যাকাত প্রদান করে আসছে। যাকাতের প্রকৃত গুরুত্ব বর্তমান হ্রাস পেলেও কিছু মানুষ যাকাত দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতিতে যাকাত আদায় করলে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন- ব্যক্তিগতভাবে যাকাত দিলে দাতার মনে শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকার ভাব জন্ম নেয়। যাকাত ফাঁকি দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাকাত গ্রহীতার মনে হীনমন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এই যাকাত দ্বারা মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত ফান্ড গঠন করে যাকাত আদায় ও বণ্টন ব্যবস্থা চালু করলে মানুষ আরও বেশী উপকৃত হবে। তার জন্য ব্যাংক কর্তৃক একটি যাকাত বোর্ড গঠন করা যায়। এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাকাত প্রদানকারী হতে যাকাত সংগ্রহ করবে। গ্রাহকদের একাউন্ট হতেও অনুমতি সাপেক্ষে যাকাত জমা করতে পারে এবং রাষ্ট্র প্রকৃত যাকাত গ্রহীতা নির্বাচন করে তাদের নিকট বণ্টন করার ব্যবস্থা করলে দাতার মনে অহংকার এবং গ্রহীতার মনে হীনম্মন্যতা জন্মাবে না। দারিদ্র্যের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। এটি যাকাতের মূল উদ্দেশ্য। এই পদ্ধতি যতদিন প্রবর্তন করা সম্ভব হবে না ততদিন ব্যক্তিগত ভাবে যাকাত প্রদান করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র জুমাতুল বিদা আজ
পরবর্তী নিবন্ধশিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি