মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | মঙ্গলবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হলো যাকাত। সম্পদশালীদের সম্পদের উপর আল্লাহর নির্ধারিত অংশের নাম যাকাত। যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং যাকাত প্রদানকারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। যাকাত গ্রহণকারী দরিদ্রদের আর্থিক সচ্ছলতা আসে। যাকাত ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ইসলামে সম্পদের সুষম বন্টনের গুরুত্ব ব্যাপক।

এই সুষম বন্টনের জন্য যেসব পদ্ধতি আল্লাহপাক প্রদান করেছেন, তার মধ্যে প্রধান হলো যাকাত। মানুষের হাতে অঢেল সম্পদ পুঞ্জীভূত হলে সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। অভাব অনটন বৃদ্ধি পায়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, মানুষের চরিত্র নষ্ট হয়। এ ধরনের নানা সমস্যা হতে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহপাক ধনী মুসলমানদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। আল্লাহ পাক পুঞ্জীভূত অলস সম্পদ পছন্দ করেন না। তিনি চান অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল থাকুক, সম্পদ মানব কল্যাণে ব্যয় হোক। সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে যাকাতের ভূমিকা ব্যাপক।

যাকাত দয়া নয়, গরীবের অধিকার। অহংকার মানুষকে ছোট করে। কোনো নাস্তিক যদি দুনিয়ার সেরা ধনী হয়, সে ভাবতে পারে এই সম্পদের মালিক আমি নিজেই। তার মনে অহংকার আসতে পারে। আর সে যদি মুসলমান হয়, তাহলে সে ভাববে আমার এ সম্পদের মালিক আমি নই, আল্লাহপাক। এই বিশ্বাসী মানুষের মনে অহংকার আসতে পারে না। নাস্তিক ধনকুবেরগণ ভাবতে পারে আমার নিকট অনেকে ঋণী, আমি কারো কাছে ঋণী নই। এই বিশ্বাস মানুষকে অহংকারী করে। আর তারা যদি হয় মুসলমান তাহলে চিন্তা করবে, হাত পা নেই পঙ্গু রাস্তার ভিক্ষুকের কাছে আমার প্রতি বছর বছর ঋণী, যে ঋণ আদায় না করলে সমস্ত সম্পদ অপবিত্র হয়ে যাবে। যে রাস্তার ভিক্ষুকের কাছে ঋণগ্রস্থ তার অহংকার করার সুযোগ থাকে না।

যাকাত মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের পবিত্র ইবাদত। তিনি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তাদের সম্পদ হতে সাদকা (যাকাত) গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। (সূরা তাওবা, ৯৪১০৩)।

ইসলামে নামাজ ও যাকাতের কোনো পার্থক্য নেই। পবিত্র কোরআনের ৮২ স্থানে নামাজের সাথে যুক্তভাবে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জায়ি (র.) বলেছেন, নামাজ ও যাকাত এ দুটি ফরজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেউ যদি আল্লাহর পুরস্কারের আশায় যাকাত প্রদান করে, তাকে পুরস্কৃত করা হবে।

যদি কেউ যাকাত প্রদানে অস্বীকার করে তার কাছে হতে শক্তি প্রয়োগ করে যাকাত আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পত্তিও নিয়ে নেওয়া হবে। (বোখারী, নাসাই, বায়হাকী)। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (র.)’র খেলাফতকালে আরবের কিছু মুসলমান যাকাত দিতে অস্বীকার করে, যদিও তারা নামাজ পড়তো, যাকাত না দেওয়ার কারণে আবু বকর সিদ্দিক (র.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আল্লাহর কসম, তারা যদি একটি উটের রশিও দিতে অস্বীকার করে, যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় তারা দিত, আমি তাদের বিরুদ্ধেও অবশ্যই অস্ত্র ধারণ করবো। সাহাবায়ে কেরামগণ সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক (র.)র সাথে। এতেই বুঝা যায় ইসলামে যাকাত কতো গুরুত্বপূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেন সীমায় যেসব বদল এল
পরবর্তী নিবন্ধজীবন বলী আবার জিত্যে