মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হল যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)। দুনিয়াতে গবেষকরা যত বস্তু ও শক্তির আবিষ্কার করেছেন, তারা আগে বিশ্বাস করেছেন- এসব আবিষ্কার করা সম্ভব। যারা বিশ্বাস করেনি তাদের দ্বারা কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। শক্তির ওপর আছে মহাশক্তি (মহানস্রষ্টা)। যারা এই মহাশক্তির উপর বিশ্বাসী তাদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করে আল্লাহ পাক সিয়ামের কথা ঘোষণা করেছেন।
এ আবেদনটি কোনো বর্ণ বা গোত্রের মানুষের নিকট নয়। সমগ্র বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষের প্রতি। যখন তাঁর প্রতি প্রবল বিশ্বাস থাকে, তখন আনন্দের সঙ্গে মেনে নিতে পারে তাঁর আইন। অবিশ্বাসীদের কাছে তাঁর আইন কষ্টদায়ক। তাই আল্লাহ পাক বিধানের কথা ঘোষণা করার আগেই ইরশাদ করলেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম’। (হে বিশ্বাসী তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে)।
ইসলাম ধর্ম পাঁচটি মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথম ঈমান তারপর সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্ব। মুসলমান প্রথমে বিশ্বাস করবে, ঈমান আনবে, তারপর বাকি চারটির অনুশীলন করবে। বিশ্বাসই যদি না করে তবে এসব পালন করা তো প্রতারণারই নামান্তর। কোরআনের এই আয়াতে পাকে বর্ণিত হয়েছে, ‘শুধু তোমাদের ওপর নয়, রোজা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল।’
মানুষ যখন জানতে পারে তার উপর অর্পিত বিধান কষ্টসাধ্য হলেও এ কষ্ট সর্বকালের মানুষের জন্য নির্ধারিত বিধান। এ কষ্ট যখন সকলেই ভাগ করে ভোগ করে, তখন স্বভাবতই শভ হালকা মনে হয়। পবিত্র কোরআনে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথার চেয়ে অতীত ইতিহাসের বর্ণনা বেশি। কোরআনের শিক্ষা হল অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমান কালে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যত নির্মাণ করা। উল্লেখিত আয়াতেও সিয়ামের ইতিহাস বর্ণনার মাধ্যমে আমাদেরকে তাকওয়ার শিক্ষা অর্জন করতে বলা হয়েছে।
সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য হল ‘তাকওয়া’। এর অর্থ আল্লাহ ভীতি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ অতিব্যাপক। সমস্ত পাপকার্য থেকে বিরত থাকার নাম তাকওয়া। যখন মানুষের মনে মহান আল্লাহর ভয় থাকে, তখন মানুষ পাপমুক্ত থাকে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের অন্তরই হল তাকওয়ার আবাসস্থল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক তোমাদের আকৃতি ও ধনদৌলতের দিতে তাকান না, তিনি তাকান অন্তরের দিকে। অন্য এক হাদিসে আছে, দেহের মধ্যে একটি মাংসের টুকরা রয়েছে, সেটি ভাল থাকলে সমস্ত দেহ ভাল থাকবে। সেটি খারাপ হলে সারা শরীর খারাপ হয়ে যাবে। জেনে রাখ, এটা হল কাল্‌ব বা হৃদপিণ্ড। আরো এক হাদিসে তিনি হৃদপিণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তোমরা জেনে রাখ তাকওয়ার স্থান এখানে।
মানুষের অন্তরের কলুষ দূরীভূত হলে ব্যক্তি পরিশুদ্ধ হয়। ব্যক্তি পরিশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ থেকে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। শান্তির জন্য দৈহিক সংযমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আধ্যাত্মিকতা অর্জনের মাধ্যমে মানব হয়ে উঠতে পারে মহামানব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলপিজির দাম আরও বাড়ল
পরবর্তী নিবন্ধচেনা আবহে ইফতারি বাজার