মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর রমজানের রোজা ফরজ হয়। পূর্বে মুসলমানদের মাসব্যাপী রোজা রাখার অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথম রমজানের সিয়াম সাধনা ছিল মুসলমানদের জন্য কঠিন বিষয়। একাধারে প্রথম মাসব্যাপী রোজা পালনকালে মুসলমানগণ যখন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এমন সময় ১৭ রমজান মদিনা হতে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক স্থানে এক হাজারের অধিক কাফেরদের বিরুদ্ধে ৩১৩ জন রোজাদার মুসলমান ঈমানী শক্তি দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার মুসলমানদের নিয়ে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে বিজয়ের জন্য দোয়া করেন। মহান আল্লাহ পাক এই দোয়া কবুল করেন। এই যুদ্ধে ১৪ জন মুসলমান শহীদ হন। আবু জেহেলসহ ৭০ জন কুরাইশ কাফের নিহত হয়। এই যুদ্ধে যদি মুসলমানগণ পরাজিত হতো তাহলে দুনিয়ার বুকে ইসলামের অস্তিত্ব থাকতো কিনা সন্দেহ ছিল।
১৪ জন সাহাবীর জীবনের বিনিময়ে পরবর্তীতে ইসলাম পূর্ণতা লাভ করে। মনীষীরা বলেন, চান্দ্র মাসের ১৪ তারিখ যেভাবে চন্দ্রপূর্ণতা লাভ করে তদ্রুপ ১৪ জন সাহাবীর আত্মদানের বিনিময়ে ইসলাম পূর্ণ হয়। এই যুদ্ধে জয়ের কারণে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস এবং ঈমানী শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ মুসলমানদের অজেয় করে তুলে। সুনিপুণ শৃঙ্খলা, অসাধারণ সাহস, রণদক্ষতা ও প্রচণ্ড ঈমানী শক্তি বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের প্রেরণা জোগায়।
ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, এ সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানগণ যে নিয়মানুবর্তিতা ও মৃত্যুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের নজির স্থাপন করেছিলেন তাতেই ইসলামের পরবর্তী ও মহত্তর বিজয়ের বিশেষ লক্ষণসমূহ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক জোসেফ হেল মনে করেন, বদরের যুদ্ধ ছাড়াও পরবর্তীকালের সমস্ত বড় বড় যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক শত্রুসৈন্যের উপর মুসলমানদের জয়লাভের মূলমন্ত্র ছিল শৃঙ্খলা ও মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করা। বদরের যুদ্ধের ফলাফল ইসলাম বিস্তারে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। এ সময় হতে ইসলামের অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটে। এই যুদ্ধের পর কাফেরদের অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়। বহু অমুসলিম মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐশ্বরিক শক্তিতে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে। বদরের যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র সমরোপকরণ ও ধনরত্ন মুসলমানদের হস্তগত সমরসম্ভার উদ্বাস্তু জাতি মুসলমানদের সমরশক্তি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও অন্তর্বিরোধে জর্জরিত মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রভাব পত্তিও
বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং ইহুদি সম্প্রদায় ও মুনাফেকি আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বদর যুদ্ধের পর ইসলাম শক্তিশালী হয়। এই যুদ্ধে সফলতার পর এক নতুন মনোবল ও সামরিক প্রেরণায় মুসলমানদের অন্তর ভরে যায়। এই যুদ্ধ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্থিব শক্তির ভিত্তি স্থাপিত হয়। ইসলাম তার প্রথম ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমান বেড়েছে হালদার পানির
পরবর্তী নিবন্ধদুঃসহ গরম, তীব্র যানজট