মারিয়া মন্তেসরি : মানবতাবাদী শিক্ষাবিদ

| বৃহস্পতিবার , ৬ মে, ২০২১ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

মারিয়া মন্তেসরি – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং চিকিৎসক। মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিশুদের শিক্ষার আলোকিত ভুবনে সম্পৃক্ত করার মহান ব্রত নিয়ে উনিশ শতকের শেষ দিকে তিনি একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। ‘মন্তেসরি পদ্ধতি’ নামে প্রচলিত এই শিক্ষা প্রণালী পরবর্তী সময়ে ইতালি সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু-বিদ্যালয়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়েসী সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। মারিয়া মন্তেসরির জন্ম ১৮৭০ সালের ৩১ আগস্ট ইতালিতে। ইউনিভার্সির্টি অব রোমের মেডিক্যাল স্কুলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে লেখাপড়া করেন তিনি। ইতালিতে মন্তেসরি প্রথম ডিগ্রিধারী নারী ডাক্তার। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করার সময় তিনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। আর এই লক্ষ্যে ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি স্কুল। মন্তেসরি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, সকল শিশুর মধ্যে সুন্দর একটা মন বিরাজ করে। এই শিশু মনেও রয়েছে সচেতনতা এবং প্রবল শক্তি। কিছুটা ভিন্ন ধারায় এদেরকে শেখানো হলে নিজেরাই শিখে নিতে পারবে সহজে। তবে শিক্ষককে নির্দেশক না হয়ে হতে হবে পরামর্শদাতা। গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে ব্লক, দড়ি, আংটা, চোঙ্গা – এমন বিভিন্ন জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ, পেশি শক্তির ব্যবহার ও সংহতিসাধনে প্রয়াসী হন তিনি। মন্তেসরি তাঁর স্কুলে শিশুদের শ্রেণিবদ্ধভাবে না বসিয়ে চলাফেরার স্বাধীনতা দিতেন। সে সময় এই পদ্ধতিতে ছয় বছরের মধ্যেই শিশুদের লেখা, পড়া ও গুণতে শেখা সম্ভব হয়ে উঠল। খেলতে খেলতে শেখার এই চমৎকার পদ্ধতি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সাধারণ শিশুদের বেলায়ও এর প্রয়োগ শুরু হয়। ১৯২২ সালে মন্তেসরি স্কুলগুলোর সরকারি পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু মুসোলিনির শাসনামলে বিরোধিতার সম্মুখিন হলে ১৯৩৩ সালে ইতালি ছেড়ে স্পেনে চলে যান।
পরের বছর ইতালিতে তাঁর স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মন্তেসরি নেদারল্যান্ড ও ভারতে প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা সংক্রান্ত তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে: ‘দ্য মন্তেসরি মেথোড’, ‘দ্য পেডাগজিক্যাল অ্যানথ্রোপলোজি’ এবং ‘দ্য অ্যাডভান্সড মন্তেসরি মেথোড’। ১৯৫২ সালের ৬ মে মানবতাবাদী ও শিক্ষাব্রতী মন্তেসরি প্রয়াত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি