মামলা তুলে নিতে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

আকবরশাহ এলাকায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আকবরশাহ এলাকায় চাকুরির প্রলোভনে গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও সেই ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে। তবে এবার পলাতক বাকি আসামিরা মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৮ মার্চ ‘নারী ও শিশু ট্রাইব্যুন্যাল-৪’ এ আকবর শাহ থানা এলাকার এক ভুক্তভোগী নারী পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী জাহানাবাদ এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে নুরুল আলম (৪৮), কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিকের আবুল বশরের ছেলে জোবায়ের হোসেন রিফাত (২৮), একই এলাকার বাসিন্দা সাহেদ শাহারিয়ার (৩২), লালখান বাজার এলাকার হাইলেভেল রোডের বাসিন্দা আশরাকা আক্তার রেশমী (২৫) ও আকবরশাহ থানাধীন বাগানবাড়ীর বেলায়েত হোসেনের ছেলে মো. সাইফুল (৩২)। এর মধ্যে গত ১২ অক্টোবর রাতে আকবর শাহ এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিকের আবুল বশরের ছেলে জোবায়ের হোসেন রিফাতকে (২৮) গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী গতকাল আজাদীকে বলেন, এই মামলায় একজন আসামি গ্রেপ্তারের পর থেকে পলাতক বাকি আসামিরা ফোনে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। পুলিশ এখনো বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। কার কাছে সহযোগিতা চাইব তা নিয়ে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। বিশেষ করে আমার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। তাকে নিয়েও আসামিরা বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। এর আগে ট্রাইব্যুন্যালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আজাদীকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর করা মামলায় আদালত গত ৬ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন। আসামিদের মধ্যে জোবায়ের হোসেন রিফাত নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ১ আগস্ট স্বামীর অসুস্থতা ও আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে আসামিদের প্ররোচনায় ভুক্তভোগী এক নারী ও তার দশ বছর বয়সী মেয়েকে ফিরোজ শাহ কলোনীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আসামিরা প্রথমে তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক ওই নারীর সাক্ষর নেন। ৯ আগস্ট ফিরোজ শাহ কলোনীর গ্রিন টাওয়ার নামে একটি ভবনটির বাসায় ওই নারীকে আটকে রেখে আসামিরা জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। এ ঘটনায় মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি রিফাত সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। এ সময় ওই নারী চিৎকার করলে তাকে মারধর করার পাশাপাশি তার কন্যা শিশুকে হত্যার হুমকি দেন আসামিরা।
আরজিতে বলা হয়, আসামিরা ভুক্তভোগী নারীর একমাত্র কন্যা সন্তানকে আটকে রেখে তার মুক্তিপণ ও তাদের ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে বাদী বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি আসামিদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন। ২০১৯ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আসামিরা টাকা আনতে গেলে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় সাইফুল ও রেশমী নামে দুজনকে ধরে আকবরশাহ থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে আসামিরা থানা থেকে ছাড় পেয়ে যান। ওই ঘটনার পর বিভিন্ন সময় তারা দাবি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাদীনির স্বামী কথিত এক ডিবি কর্মকর্তার মাধ্যমে আসামিদের হাতে সাড়ে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন। এরপরও বাদীকে ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দিয়ে জিম্মি করে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। পরে কোনো উপায় না দেখে আদালতের দারস্থ হন ভুক্তভোগী ওই নারী এবং তার স্বামী। বাদীপক্ষ বলছে, পুলিশ এখনো ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজেকে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস খাদে আহত ৯
পরবর্তী নিবন্ধসাভারে রাতে দরজা ভেঙে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ