মানবতাবাদী ও জনদরদী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু

আজিজুল হক নসু | বৃহস্পতিবার , ৫ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

তুমি নেই আছে শুধু তোমার স্মৃতি রেখে যাওয়া আদর্শ। ভুলি নাই ভুলবো না আজীবন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর যিনি আওয়ামীলীগকে সু-সংগঠিত করেছেন আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারী মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, তিনি একাধারে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক মহলে পরিচিতি করেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৭৭ জাতি ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আমি তার সান্নিধ্যে এসে দীর্ঘ ২৬ বৎসর পাশে ছিলাম। তাঁর মত বড় মাপের মহৎ হৃদয়বান জাতীয় নেতার সাহচর্য্য লাভের সুযোগ হয়েছে। বিশ্বস্ততার সঙ্গে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অভিভাবকত্বে তাঁর সঙ্গে জনগণের সেবামূলক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তাঁকে নিবিড়ভাবে দেখেছি, মিশেছি। সুখ, দুঃখের সঙ্গী হয়েছি। আমি দেখেছি, তাঁর মধ্যে এক নরম প্রকৃতির হৃদয়, মানুষকে ভালবাসার উদার মন-মানসিকতা। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সমস্ত লোভ-লালসার উর্ধ্বে ঊঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্র সৈনিক অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন, তিনি স্বাধীনতা উত্তর কালের সেই সব বিরল রাজনীতিবিদদের অন্যতম। একটা মানুষের সঙ্গে চলে যায় গোটা একটি পৃথিবী। কথাটি লিখেছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দ মুখোপাধ্যায়। আসলে সব মানুষই জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্র গড়ে তোলে আপন আপন ভুবন। আর যার কর্মে কীর্তিতে, মেধায়, মননে, স্নেহ, ভালবাসায় ও সখ্যতায় অনন্য স্বাক্ষর রেখে যায়। তারা সারা জীবন ধরে তৈরী করে এক একটি বিচিত্র ও বর্ণিল অনন্য পৃথিবী। অবিনাশী যৌথ স্মৃতির অংশীদার। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছিল এমনি এক অসাধারণ মহাপুরুষ। যার সঙ্গে চলে গেছে বিশাল এক প্রাণবন্ত জগত। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সংগঠন ও জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর জীবনী থেকে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। জীবনে অনেকবার মন্ত্রীত্বের সুযোগ পেয়েও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হয়নি। তিনি অত্যন্ত দুরদর্শী ও বিচক্ষণ রাজনীতির ধারক ছিলেন। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অভিভাবক ও ধারক বাহক ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন রাজকীয় এবং বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। রাজনীতিতে যেমন ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা ও শিল্প স্থাপনে তিনি ছিলেন একজন উচ্চ মাপের সফল ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অপরিসীম। যে কোন কঠিন সময়ে দলের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত এক কর্মী। ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন অভিভাবক। তাঁর মৃত্যু চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগকে শুধু অভিভাবকহীন করেনি, দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। তবুও তিনি আমাদের অন্তরে চির জাগ্রত। প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। ১৯৪৫ সালের ৩রা মে আনোয়ারা উপজেলা হাইলধর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন এডভোকেট আলহাজ্ব নূরজ্জামান চৌধুরী, মাতা খোরশেদা বেগম। ২০১২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সিঙ্গাপুর একটা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর একদিন বাবু ভাই এর বান্ডেল রোড বশিরুজ্জামান চেম্বার অফিসে যাই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমাকে ভিতরে যেতে বলে, আমি ভিতরে যাই, ভিতরে গিয়ে দেখি বর্তমান সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল হাকিম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম নুরুল আলম চৌধুরী এমপি। বাবু ভাই তখন নুরুল আলম চৌধুরীকে বলেন তোমার ভাগিনা এসেছে। আমার হাতে একটি খামের ভিতর ১০ লক্ষ টাকার চেক দেন। আমি তা নিয়ে আমার বাবার সাথে দেখা করি। আমার বাবা চেক ফেরত দিতে বললে আমি সন্ধ্যায় তার বাসায় গিয়ে চেকখানা ফেরত দিলাম। আমি বলেছি আমি ব্যবসা বুঝি না টাকা দিয়ে কি করব। তারপর বাবু ভাইকে আমি দাবি করলাম আপনি আমাকে কিভাবে দেখবেন। বাবু ভাই বললেন ওনার ছেলে-মেয়েদের মতো দেখবেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেভাবে দেখেছেন, কোন দিন আমাকে ভুলেননি। ওনার সান্নিধ্যে এসে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। খ্যাতি, পরিচিতি, ভালবাসা, সম্মান, অনেক কিছু। বাবু ভাই আমাকে ইউসিবিএল এ চাকরি প্রদান করেন। আমি বাবু ভাই এর লোক হওয়াতে ১৯৯৩ সালে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। আমি বাবু ভাইয়ের বড় ছেলে মাননীয় ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা কর্ণফুলী হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাবেদ), মেঝ ছেলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও বাণিজ্য সম্পাদক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এর (ইসি) চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান চৌধুরী রনি ও ছোট ছেলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড এর (পরিচালক) আসিফুজ্জামান চৌধুরী জিমি -ওনাদের বাবার মত পরিবারের একজন মনে করেন, তা আমার পরম পাওয়া।
তাঁদের সহযোগিতায় আজ আমি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্বে ও আর আই সিকিউরিটির কর্ণধার এবং আখতারুজ্জামান সেন্টার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, সদস্য পরিচালনা পর্ষদ বরুমচড়া শহীদ কামরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়। তাঁদের পরিবারের সাথে বেঈমানি করলে আমি তো মোনাফেক হয়ে যাব। তাদের পরিবারের সাথে আছি এবং আমৃত্যু থাকব। আমি বঙ্গবন্ধু ও বাবু ভাইয়ের আদর্শের সৈনিক। আমি বাবু ভাইকে আদর্শ মনে করি। আল্লাহ -রাসূল আমার মা বাবার পর আখতারুজ্জামান বাবু ও তার পরিবার আমার কাছে অমূল্য রত্ন। বাবু ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
লেখক : সভাপতি, আখতারুজ্জামান সেন্টার দোকান মালিক সমিতি

পূর্ববর্তী নিবন্ধদারিদ্র্যের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে ১৫ কোটি শিশু
পরবর্তী নিবন্ধড. মঈনুল ইসলামের কলাম