মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

বঙ্গোপসাগর এখন ট্রলারশূন্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ২১ মে, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগর এখন ট্রলারশূন্য, যেন অলংকারহীন এক নারী। কক্সবাজার সৈকত থেকে দিনের বেলায় ট্রলারগুলোর সাগরে যাওয়া-আসার দৃশ্য এবং রাতের বেলায় বাতি জ্বালিয়ে মাছ ধরার সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ছে না। গতকাল শুক্রবার থেকে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে সাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় বঙ্গোপসাগরের চিরাচরিত সেই দৃশ্যপট হঠাৎ বদলে গেছে।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে ট্রলারগুলোর মাছ ধরার দৃশ্য বেশ উপভোগ্য। বিশেষ করে রাতের বেলায় সারি সারি ট্রলার যখন বাতি জ্বালিয়ে সাগরে মাছ ধরে, তখন সেই দৃশ্যকে মনে হয় সাগরের ওপারের গ্রামের মতো। কিন্তু শুক্রবার থেকে সেই চিরাচরিত দৃশ্য ৬৫ দিনের জন্য আর চোখে পড়বে না।

সেই সাথে সামুদ্রিক মাছের স্বাদও নেওয়া যাবে না এই সময়ে। অভিমত কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খানের। তার মতে, পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের ইলিশ ও রূপচান্দার মতোই জনপ্রিয় ট্রলারগুলোর মাছধরার দৃশ্য। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে প্রায় ৭ হাজার ইঞ্জিন নৌকা রয়েছে। এর মধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। কিন্তু ২০ মে থেকে মাছধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালেই মধ্যেই সকল ট্রলার ঘাটে ফিরে আসে। এখন কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলে, শ্রমিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান জানান, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টা থেকে মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহণ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৬৩ হাজার ১৯৩ জন তালিকাভূক্ত জেলের প্রত্যেকের জন্য প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি করে মোট ৩ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী জেলার আট উপজেলায় তা বিতরণ করা হবে। পরবর্তীতে তাদেরকে আরো ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, ২০ মে থেকে সাগরে মাছধরা ও পরিবহণের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এখন ‘মৎস্যশূণ্য’ খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। বরফকলগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এরআগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোভিডে এক মাস মৃত্যুহীন বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে ৫ মৃত্যু, চারটি মোটরসাইকেলে