জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে চলছে একের পর এক অভিযান। ধরা পড়ছে, উদ্ধার হচ্ছে অস্ত্র–বই–ট্রেনিংয়ের পোশাক। জানা যাচ্ছে তাদের প্রশিক্ষণের রীতি–নীতি–পদ্ধতি। কিন্তু এত কিছু করেও তাদের নিঃশেষ বা নিস্তেজ করা যাচ্ছে না। ঠিকই জঙ্গি সদস্যরা ভার্চুয়ালি সক্রিয় রয়েছে। জঙ্গিবাদে আগ্রহী হতে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, এ বিষয়ে তাদের অভিযান চলছে, পাশাপাশি এটি বন্ধ করার জন্য কিংবা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মুখপাত্র পুলিশ সুপার মো. আসলাম খান বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এটিইউ কাজ করছে। জঙ্গিবাদ কোনো দলীয় বা দেশীয় সমস্যা নয়, এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা।
তাই এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, জঙ্গি দমনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। আমরা চাইছি এই অবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে আসতে। আর জঙ্গিদের যেভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে দেশের মানুষ, এই ঘৃণাটাই যথেষ্ট। তবে নিজের সন্তানরা কার সঙ্গে চলাফেরা করে, সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, কথিত হিজরতের উদ্দেশে এখনও বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে অনেকে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অনেককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার কিংবা ফিরিয়ে এনে ডিরেডিকালাইজড করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। যদিও এখনও অনেকের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অভিভাবকরা সচেতন হয়ে উঠছেন; সন্তান কিংবা পরিবারের সদস্য হঠাৎ নিখোঁজ হলে অনেকেই এখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সচরাচর পরিবারের কোনো সদস্য, তরুণ–তরুণী কিংবা কিশোর–কিশোরীর নিখোঁজের তথ্য পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবস্থান এবং কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা–এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। কারো দ্বারা মোটিভেটেড হয়েছে কিনা এসব বিষয় জানার চেষ্টা করা হয়। তাদের আচরণগত কোনো পরিবর্তন এসেছিল কিনা এসব বিষয় পরিবারের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
পরিবারের সদস্য বা সন্তানকে ফিরে পাবার জন্য অভিভাবকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিংবা কথিত হিজরতের নামে কতজন বাড়ি ছেড়েছে সে পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। কারণ হিসেবে তারা বলেন, অনেক তরুণ–তরুণী, কিশোর–কিশোরী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করেও বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তাই কেউ নিখোঁজ হলে আমরা সব ধরনের পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় আনি। থানায় অভিযোগ এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বাড়ি ছাড়ার কারণ সম্পর্কে বোঝা সম্ভব হয়।
সম্প্রতি কথিত হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হওয়া ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র্যাব। এসব তরুণদের দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে রাঙামাটি, বান্দরবানের পাহাড়ে রাখা হয়েছে জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল–মইন বলেন, তালিকাভুক্ত ৫৫ জন হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে এখন পাহাড়ে অবস্থান করছে। পাহাড়ে গত কয়েক মাস ধরে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কথিত হিজরতকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের ধরা হবে। এছাড়া হিজরতকারীদের পেছনে যারা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।