বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি

এম এস ফরিদ | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

কাজী নজরুল ইসলাম ২৫ মে ১৮৯৯ সাল,বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ফকির আহমেদ আর মাতার নাম জাহেদা খাতুন। কাজী নজরুল ইসলাম অন্যতম অগ্রনী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও একজন দার্শনিক। যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল গ্রামের মক্তব থেকে শুরু। তিনি একটি মসজিদের মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। জীবিকার তাগিদে রুটির দোকানেও কাজ করেন তিনি। ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। শুরু হয় বিদ্রোহী জীবন যাপন। কলম ধরেন সাম্যবাদীতার পক্ষে। অত্যাচারী আর জুলুমবাজদের প্রতি হুংকার ছাড়েন তিনি। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশির মতো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেলেই তিনি উপাধী পান বিদ্রোহী কবি হিসেবে। বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। কাজী নজরুল ইসলাম ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা নজরুল গীতি নামে পরিচিত। তিনি ধূমকেতু, লাঙল, দৈনিক নবযুগ নাকম বেশ কিছু পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। লেখালেখির জীবনে তিনি পেয়েছেন অনেক সম্মাননা আর উপাধী। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। নজরুল ছিলেন সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত। প্রতিটি লেখায় অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তাই তিনি আজ সাম্যের কবি, আমাদের মানবতার কবি। কাজী নজরুল ইসলামের শিশুতোষ রচনাও ছিলো বেশ সমৃদ্ধ। এ ছাড়াও নবযুগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল ইসলাম বেতারে কাজ করছিলেন। এমন সময় অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। আর এই অসুস্থতার মধ্য দিয়েই ২৯ আগস্ট,১৯৭৬ সালে জীবনাবসান ঘটে। আমরা হারাই একজন দীপ্ত কণ্ঠের প্রতিবাদী লেখকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকামাল পাশা
পরবর্তী নিবন্ধনগরে সাত প্রতিষ্ঠানকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা