বন্দর চেয়ারম্যানের সাথে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধিদলের বৈঠক

চ্যানেল খনন ও ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করবে আজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রত্যাশার বে-টার্মিনালের ‘চ্যানেল খনন’ এবং ‘ব্রেক ওয়াটার’ নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী বিশ্ব ব্যাংকের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামে। উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা গতকাল রোববার সকালে বন্দর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সাথে বৈঠক করেছেন। এই সময় বন্দরের সদস্যবৃন্দ এবং বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধিদলটি বে টামির্নালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বে টার্মিনালের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত নিয়েও তারা কথা বলেন। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদলটি আজ (সোমবার) সকালে বে টার্মিনাল এলাকাসহ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করবে।
সূত্র জানায়, পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র উপকূলে জেগে উঠা একটি চরকে ঘিরে দেশের আগামীর একশ’ বছরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এই টার্মিনালটি নির্মাণে চ্যানেল খননের পাশাপাশি সাগরের উত্তাল ঢেউকে বাঁধ দেয়ার জন্য ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনা করতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার (সিসিইএ) কমিটির অনুমোদন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি অপারেট করার ব্যাপারে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহী। এর মধ্যে দ্য পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ), সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। বিদেশের শীর্ষস্থানীয় টার্মিনাল অপারেটররা বে টার্মিনালের ব্যাপারে আগ্রহী হলেও তারা চ্যানেল খনন এবং ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের মতো খাতে অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। তাদের চাওয়া হচ্ছে, টার্মিনাল তৈরি করে দেয়া হলে তারা নিজস্ব বিনিয়োগে ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন করে টার্মিনাল অপারেট করবে। কিন্তু শুরুতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তারা রাজি নয়। এমতাবস্থায় বে-টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর জন্য চ্যানেল তৈরি এবং জাহাজসহ বন্দরকে সাগরের উত্তাল ঢেউ থেকে নিরাপদ রাখতে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। সাগরে বাঁধ না দিয়ে বে টার্মিনাল গড়ে তোলা সম্ভব নয়, আবার চ্যানেল খনন করা না হলেও জাহাজ ভিড়ানোও সম্ভব নয়। অর্থাৎ বে-টার্মিনালের প্রথম এবং প্রধান কাজই হচ্ছে চ্যানেল খনন ও ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ। এতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশাল এই বিনিয়োগ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ যখন
নানাভাবে চেষ্টা করছিল তখন বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বে টার্মিনালের এ দুইটি খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়াগে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। তারা অত্যন্ত স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে ঋণ প্রদান করতে আগ্রহী। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ঋণসুবিধা নিলে কতটুকু লাভ হবে, ঋণ পরিশোধে কত সময় পাওয়া যাবে, বে টার্মিনালের আয় থেকে ঋণ পরিশোধ ঠিকঠাকভাবে হবে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল গতকাল চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। টেকনিক্যাল মিশনের অংশ হিসেবে প্রতিনিধিদলটি বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন, সাগরের গতি প্রকৃতি, স্রোতের তীব্রতা, জোয়ার ভাটাসহ নানা বিষয়ে সরজমিনে পরিদর্শন করবে। বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট মি. হুয়া তানের নেতৃতাধীন প্রতিনিধিদলে সিনিয়র ইনফ্রাসট্রাকশার প্রোগ্রাম লিডার রাজেশ রোয়াতগি, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর দিলশাদ দোসানি, সিনিয়র এনভায়রণমেন্টাল লিসবেট কুগলার, সিনিয়র স্যোসাল ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মোরিসিও মোনটেরিও ভিয়িরা, স্যোসাল ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সাব্বির আহসান, সিনিয়র প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট শ্রীনিবাস ডেভারাকোন্ডা, সিনিয়র ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন চৌধুরী, ট্রান্সপোর্ট কনসালটেন্ট তিয়ান মার্টিন, সিনিয়র পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার কোমেলিস জোহানিজ ক্লাভার, সিনিয়র ড্রেজিং ইঞ্জিনিয়ার ড্রিক রোকিমা রয়েছেন। ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বে টার্মিনালের টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গতকাল সকালে বন্দর ভবনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বে টার্মিনালের বিভিন্ন বিষয় এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদলের নেতা বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট মি. হুয়া তানসহ টেকনিক্যাল টিমের সদস্যরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আজ (সোমবার) বে টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুমতি ছাড়া কোনো সংস্থা রাস্তা কাটলে আইনগত ব্যবস্থা : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬