বদিউল আলম চৌধুরী : এক প্রতিবাদী পুরুষের প্রতিকৃতি

মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন | রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ


ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামী অধ্যায়। এই অধ্যায় প্রসঙ্গে কিছু প্রকাশ করতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবে প্রথমেই প্রবেশ করে তমদ্দুন মজলিশ নামক অরাজনৈতিক সংগঠনটির নাম। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র (পৃ.-৯১) একস্থানে লিখেছেন, ‘আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উদু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল …। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয়ভাবে একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে…।” তখন চট্টগ্রামের কাট্টলীর বদিউল আলম চৌধুরী তমদ্দুন মজলিসের তরুণ তুর্কি হিসেবে সেই ভাষাসংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন।
বদিউল আলম চৌধুরীর এক সাক্ষাৎকার (মাসিক চাট্টগাঁ ডাইজেস্ট, ফেব্রুয়ারি ২০০০; সম্পাদক সিরাজুল করিম মানিক (পৃ:-৮) পাঠে জানা যায়-১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের কৈবল্যধাম পাহাড়ে তমদ্দুন মজলিস আয়োজিত কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে যোগদানের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনটির সাথে, এর নাবিকদের সাথে সহযাত্রী হওয়ার সুযোগ লাভ করেন তিনি। সেই ক্যাম্পের কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের আরেক ভাষা সৈনিক ডা. মোহাম্মদ আলী লিখেছেন, “আমার যদ্দুর মনে পড়ে সেই বছর (১৯৪৮ সালে)’র শেষে দিকে চট্টগ্রামের কৈবল্যধাম আশ্রমের অনতি দূরে, তমদ্দুন মজলিশের প্রথম তাবুবাস কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচীতে মজলিশের কেন্দ্রীয় নেতা কর্মী ও চট্টগামের নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়। এই সুবাদে অধ্যাপক আবুল কাশেম, অধ্যাপক শাহেদ আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর এর সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয় ও ভাই সম্পর্ক গড়ে উঠে।” (শাহেদ আলী স্মারক গ্রন্থ, ৬ ডিসেম্বর ২০০২, পৃ-৮১)। সেই ক্যাম্পসমূহে বদিউল আলম চৌধুরীর উজ্জ্বল উপস্থিতির কথা উল্লেখিত হয়েছে ভাষা-সৈনিক অধ্যাপক চৌধুরী শাহাব উদ্দীন আহমদ খালেদের স্মৃতিচারণেও। (দ্র: শাহেদ আলী স্মারকগ্রন্থ)। সে সম্পর্কিত এক স্মৃতিচারণে স্বয়ংপ্রবীণ ভাষা-সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর লিখেছেন, “বদিউল আলম চৌধুরীর কথা উঠলেই মনে পড়ে তমদ্দুন মজলিশের সেই প্রথম ক্যাম্পের কথা, যে ক্যাম্পে তাকে প্রথম দেখছিলাম। তখন মজলিসের শিক্ষা ক্যাম্পের নাম ছিল তাবু জীবন (টেন্ট লাইফ)। আর টিমের সাথে ঠিক রেখে ক্যাম্পে জন্য ব্যবস্থা থাকতো একাধিক তাবু”। (বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন, অক্টোবর ২০১৪, পৃ:-৩)।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যে রক্তাক্ত ট্রেজেডি হয়, সে খবর পরদিন পৌছাঁলে দাবানলের মতো দ্রোহের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে দক্ষিণ বাংলা। বীর চট্টলার বীর সন্তান বদিউল আলম চৌধুরী ও সেই দ্রোহে সামিল হন। মোমিন রোড থেকে মিছিল করে লালদীঘি মাঠে যান এবং সেখানে সমাবেশ করেন। মিছিলের আগে পিছে ছিলো পুলিশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদেরকে উৎসাহিত করেন। ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকেও একটি মিছিল বের হয় হালিমা বেগমের নেতৃত্বে। খুনি নুরুল আমিনের ফাঁসি চাই। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই-প্রভৃতি স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চট্টগ্রাম শহর। এক কথায় মিছিল মিটিং এর শহর হয়ে উঠে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম কলেজে তখন যে শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়েছিলো, সেটির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী। তখন শহীদের মাগফিরাত কামনায় করে শহীদ মিনারে ফাতেহা পাঠ করা হতো। (মাসিক চাটগাঁ ডাইজেস্ট ঐ) বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা যে কত প্রগাঢ় ছিলো, তা তাঁর দিনলিপি পাঠ করলেও জানা যায়। বদিউল আলম চৌধুরী এতে লিখেছেন, “এই দিন কেবল মায়ের ভাষা বাংলাকে চিরদিনের জন্যে যে কোন প্রকার অশুভ ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করার একটি অজেয় প্রাচীর সৃষ্টি করেনি, এই দিন মাটি, মা ও মায়ের ভাষাকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ ও উপলব্ধির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেছে।” (বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন, পৃ:-৯৪)।
বায়ান্নর রক্তরাঙা পথ ধরেই আসে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একান্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। উনসত্তরে যখন গণআন্দোলন আরম্ভ হয় তখন বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের রাজনৈতিক শাখা খেলাফতে রববানী পার্টির চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি উক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গণমানুষের দাবির সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে গণ আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় পার্টির চট্টগ্রাম অধিবেশন থেকে। সে কর্মসূচীর সংবাদ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ এর দৈনিক আজাদী, দৈনিক ইনসাফ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গণ অভ্যুত্থানের সময় গণমিছিলে অংশগ্রহণ করার গৌরবও অর্জন করেন তিনি। (দ্র: ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ এর ‘ইস্টার্ণ এক্সমিনার’ ও দৈনিক আজাদী)। উনসত্তরের সেই উত্তাল সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামসুজ্জোহা নিহত হওয়ার পর পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে প্রতিবাদ করেন তিনি। সেই প্রেস রিলিজে বাঙালিদের ওপর সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনা এবং শেখ মুজিব সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি ও তাদের নামে দায়েকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। তাঁর এই বিবৃতি উনসত্তরের ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদী, ইস্টার্ণ এঙমিনার প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দৈনিক আজাদী এর ৩ ফাল্গুন ১৩৭৫ সংখ্যায় খেলাফতে রব্বানী পার্টি চট্টগ্রাম শাখার দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সংবাদ ছাপা হয়। সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে সরকারী দমননীতির তীব্র নিন্দা করা হয় এবং পার্টির সকল কর্মীকে ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহিত সক্রিয় সহযোগিতা করার এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ হইতে আন্দোলনকে দূরে রাখার চেষ্টা করিতে আহ্বান জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তখন পরবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে মনস্থ করেছিলেন। জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এর প্রতিক্রিয়ায় পত্রিকায় প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বদিউল আলম চৌধুরী বলেন, “সংগ্রামী জনতার আন্দোলনের ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করিবেন না বলিয়া ঘোষণা করিতে বাধ্য হওয়ায় জাতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়াছে (দৈনিক আজাদী, ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯)। এভাবে তিনি গণঅভ্যুত্থানের সময় গণমিছিলে যোগদিয়ে, গণআন্দোলনে শরীক হয়ে, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে গণমানুষের দাবির পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান। সেই দারুণ দুঃসময়ে তাঁর এই দৃঢ়তা প্রবল দেশ প্রেমেরই দৃষ্টান্ত বহন করে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। তার পরদিন ৮ মার্চ বদিউল আলম চৌধুরী ‘স্বাধীন নয়াবাংলা’র স্লোগান নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তারপর তো স্বল্পদিন পরে সূচিত হয়ে যায় স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেই সংকটময় সময়ে স্বদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে তাঁর ভূমিকা কি ছিলো সে সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি জহুর-উশ-শহীদ এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন, “তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। আন্দরকিল্লা সিটিকর্পোরেশনের সম্মুখে পুলিশ বিটের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং বিশাল এক মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এই মিছিল তখন আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হয়ে কোতোয়ালী মোড় গিয়ে শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠন করে পাক-হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ব দেন তিনি। অবশ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিপক্ষে এসব কাজ চালানো উচিত কিনা এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্থানে রবুবিয়ত আন্দোলনের যে সব গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, তার সবকটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর সামগ্রিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতির পর্যালোচনা শেষে স্বাধীনতার পক্ষেই তিনি সবসময় অটল থাকেন।”(বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন, পৃ:-২৮-২৯)। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনের পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ণে তিনি ইঞ্জিনিয়ার আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সহযোগিতা করে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান সহ তাদেরকে খাবারও সরবরাহ করেন স্ত্রীর সহযোগিতায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা প্রদানের অপরাধে আলবদর বাহিনী একাত্তরের ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর তাকে ধরে নেওয়ার জন্য কয়েকবার চেষ্ঠা চালায় এবং ব্যর্থ হয়। (তথ্য : বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন) মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান তাঁর বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শীর্ষক বিশাল বইয়ের একস্থান লিখেছেন: “চট্টগ্রামে খেলাফতে রব্বানী পার্টি নেতা ছিলেন রফিকউল্লাহ চৌধুরী, সোলায়মান, এ এস এম মোজাফ্‌ফর, হারুনুর রশীদ খান, বদিউল আলম চৌধুরী (জেলা সম্পাদক) আজিজুর রহমান চৌধুরী, মনোয়ার আহমদ, জামাল উদ্দিন চৌধুরী, এস এম তোফাজ্জল আলী, কে এম আবদুল ওহাব চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন খালেদ, ডা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। দলটি ইসলাম পন্থী হলেও এ দলের এক অংশ হারুনুর রশীদ খান, বদিউল আলম চৌধুরী, আজিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন (প্রথম প্রকাশ ঃ ১৯৯৩, চট্টগ্রাম।)
বর্তমান রাজনীতি মানে যেখানে মন্দ ও মিথ্যার মহোৎসব সেখানে বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন সৎ ও সত্যে সমর্পিত সময়ের এক সাহসী সন্তান। রাজনীতি তাঁর রক্তের মধ্যে থাকলেও, রাজনীতিকে কখনো তিনি রক্তাক্ত করেননি, রাজা বনতে চান নি, বরং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কিভাবে সেবা করা যায়, সেটাই চেয়েছেন মনে প্রাণে। ১৯৬২ সালের দিকে ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কাস ফ্রন্টের সাথেও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ গঠিত হলে তিনি ঐ দলের বৃহত্তর চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি মনোনীত হন। তাছাড়া দলটির চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে সম্মিলিত বিরোধী দল ‘গণফ্রন্ট’-এর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন-জমিয়তুল ফালাহ্‌’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন গভর্ণর, কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট প্লাসিড্‌স হাইস্কুল, কাট্টলী জাকেরুল উলুম মাদ্রাসা, মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি, তমদ্দুন মজলিস, চট্টগ্রাম চাঁদ দেখা কমিটি, হযরত শাহ্‌ সুফী মঈনুদ্দীন শাহ্‌ (রহ.) মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম ঈদ জামাত কমিটি-প্রভৃতির সাথেও গভীরভাবে জড়িত ছিলেন।
বদিউল আলম চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাকে সামান্যতম স্থানও দেননি-কি ব্যক্তিগত জীবনে, কি ব্যবহারিক জীবনে। মহান আল্লাহর ওপর অটল বিশ্বাস ও আনগত্য এবং রসুল (সাঃ) এর আদর্শ ছিলো তাঁর চলার পথের পুুঁজি বা পথেয়। ১৯৯৭ সালে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বহু বুজুর্গানে দ্বীনে স্নেহসান্নিধ্য ও দোয়া লাভে সিক্ত হয়েছিলেন; যাঁদের মধ্যে মওলানা ওলী আহমদ নিযামপুরী (র.), মওলানা আবদুল গণি (র.) মাদার্শার শাহ্‌ সাহেব হুজুর খ্যাত শাহ্‌ ফজলুল করিম (র.), কুমিল্লার মামা খ্যাত হযরত আইয়ুব আলী বাদশাহী (র.) প্রমুখ অন্যতম।
তাঁর জন্ম ১৯ জানুয়ারি ১৯৩২ সালে-চট্টগ্রামের বিখ্যাত বনেদী বাড়ি কাট্টলীর নাজির বাড়িতে। পিতার নাম ওহিদুল আলম চৌধুরী এবং মায়ের নাম সুলতানা আরা বেগম। প্রখ্যাত জমিদার ফয়েজ আলী চৌধুরী ছিলেন তাঁর পিতামহ। ২০০৭ সালের ১০ই অক্টোবর (২৭ শে রমজান) মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন তিনি। এখন আমাদের দরকার তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয়ের কাছে আমাদের আবেদন তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণ করে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখা হোক।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও রম্য লেখক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধনিখুঁত-চিন্তক আবুল ফজল