ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

দীঘিনালায় কমছে আবাদী জমি প্রতিদিন কাটা হয় সাড়ে ৩ লাখ ঘনফুট মাটি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় কৃষি জমির টপসয়েল কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে একটি চক্র। ফলে এখানে কমছে আবাদী জমির পরিমাণ। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০১০ এবং কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১৩ অনুযায়ী ‘কৃষি জমি কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।’ কিন্ত খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এই আইন মানছে ইটভাটা মালিকরা। আইন অমান্য করে উপজেলায় ভাটাগুলো ইট প্রস্তুত করতে ব্যবহার করছে কৃষি জমির টপসয়েল।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কৃষি জমির মালিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জমির উপরিভাগ কাটছে ইটভাটা মালিকরা। এর আগে উপজেলার কামুক্যাছড়ায় টপসয়েল কাটার বিষয়ে সতর্ক করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তাফা। কিন্তু এখন জরিমানা এড়াতে রাতের অন্ধকারে আবার কখনো কখনো দিনেই চলছে অবৈধ এ কাজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পুলিন হেডম্যান পাড়ার আনন্দময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে একটি স্কেভেটর ৪টি মাহিন্দ্রে (টলি) মাটি ভরাট কাজ করে দিচ্ছে। সেগুলো যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী এডিবি ব্রিক ফিল্ডে। এ সময় দেখা যায়, প্রায় ১০ ফুট গভীর খনন করে স্কেভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। টপসয়েল কেটে নেওয়ায় এসব জমিতে আর ফসল চাষের সম্ভাবনা নেই। বর্ষায় বৃষ্টির পানি জমে এসব জমি ডোবায় পরিণত হবে।

এ বিষয়ে জমির মালিক স্বদেশ চাকমা জানান, মাটি কাটার জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। অন্যদিকে জমির টপসয়েল কাটার বিষয়ে জানতে এডিবি ব্রিক ফিল্ডের স্বত্তাধিকারী মো. নাসির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি সাক্ষাৎ করতে বলেন এবং মাটিকাটার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খাগড়াছড়ি জেলায় অবৈধভাবে ৩৮টি ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। প্রতিটি ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিদিন কৃষি জমি থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ঘনফুট মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়।

এদিকে মাটি কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন চাকমা। তিনি বলেন, এখানে ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ পুকুর কাটছে। কিন্তু যেভাবে চারপাশের মাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে, তাতে করে পাশ্ববর্র্তী লোকদের ক্ষতি হবে।

জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি উপজেলার মেরুং হাজাছড়ায় পাহাড় কাটায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও গত ২৭ জানুয়ারি মেরুং আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পাহাড় কাটায় ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ের কৃষি জমিতে মাটির উপরি স্তরের ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত টপসয়েল। প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমিতে প্রতি ইঞ্চি টপসয়েল তৈরি হতে সময় লাগে ১শ থেকে ৩শ বছর। ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে কৃষি জমির টপসয়েল ব্যবহার করার কারণে কৃষিতে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এতে কৃষি জমি বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, অবৈধ ইটভাটায় কৃষি জমির টপসয়েল কাটায় এসব জমি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে ওঠছে। এখানে প্রভাবশালী চক্র জড়িত। ইটভাটা মালিকরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে টপসয়েল কিনে নিচ্ছে। আবার অনেকে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি ও বনের কাঠ ব্যবহার করায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধবিতর্কের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বারে দুলালকে বিজয়ী ঘোষণা