প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

| বুধবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

গত ৪ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘অটো পাসের জেএসসিতে অনিয়ম/কর্মকর্তারাই জড়িত’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। ৫ ডিসেম্বর বোর্ডের উপসচিব বেলাল হোসেনের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রতিবাদ পত্রে সংবাদটি ভিত্তিহীন দাবি করে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জেএসসি-২০২০ এর চেক লিস্ট প্রকাশ করা হলেও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোল নম্বর সৃজন করে তা ২৭ জুন প্রকাশ করা হয়। আর ১৪ ফেব্রুয়ারিসহ তৎপূর্বের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন সৃজন করা হয়। একই সাথে নির্ধারিত সময়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়া কিন্তু চেক লিস্ট থেকে বাদ পড়া ২৮ জনসহ মোট ৩৩ জন শিক্ষার্থীর রোল নম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে সৃজন করা হয়। সকল নিয়ম মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জনস্বার্থে রেজিস্ট্রেশন ও চেক লিস্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে বিধায় এক্ষেত্রে কোনো
অনিয়ম হয়নি এবং কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত থাকার কথাও সঠিক নয় বলে দাবি বোর্ড কর্তৃপক্ষের। সংবাদে কর্মকর্তারাই যে জড়িত মর্মে মন্তব্য করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে প্রতিবাদ পত্রে বলা হয়েছে, এককভাবে কর্মকর্তারা কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না। একটি ফাইল নিস্পাদনে সহকারী থেকে শুরু করে চেয়ারম্যানের অনুমোদনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এছাড়া সংবাদের এক অংশে চেয়ারম্যান কর্তৃক ফাইল ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য এবং মানহানিকর বলে প্রতিবাদ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য : সংবাদটি ভিত্তিহীন দাবি করলেও ফল প্রকাশের প্রায় ৯ মাস পর নতুন করে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর জেনারেট (সৃজন) করার কথা স্বীকার করে নিয়েছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী-ই বলেছেন যে, তারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জেএসএসি-২০২০ এর রেজিস্ট্রশন কার্যক্রম ক্লোজড করে দিয়েছেন এবং এর পরবর্তী নতুন করে কোন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন তারা করেন নি। সে সুযাগও নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফল প্রকাশের ৯ মাস পর গত অক্টোবরে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর সৃজন করার ঘটনা ঘটেছে। এ সংক্রান্ত চিঠির কপি আজাদীর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সুতরাং নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর সৃজনের ঘটনা যে ‘গুরুতর অনিয়মে’র মাধ্যমে হয়েছে, তা বিদ্যালয় পরিদর্শকের বক্তব্যেই সুস্পষ্ট। তাছাড়া ঢাকা ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদ্বয়ও বলেছেন এই সময়ে (অক্টোবরে) এসে জেএসসি-২০২০ এর নতুন কোন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ নেই। শিক্ষাবোর্ডের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম বোর্ড কমিটির ৪ ডিসেম্বরের সভায়ও এ ঘটনা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ে ফি জমা দেয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন না হওয়া এক শিক্ষার্থীর আবেদন ৫ সেপ্টেম্বর পেলেও ওই সময়ে আর কিছু করার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দাফতরিক চিঠিতে দেখা যায়, ১৯ অক্টোবর ও এর পরেই বেশ কিছু শিক্ষার্থীর নতুন রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর সৃজনের ঘটনা ঘটেছে।
আর প্রতিবাদ পত্রে ১৪ ফেব্রুয়ারিসহ তৎপূর্বের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে নতুন রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর সৃজনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেছেন, ৩০ জানুয়ারি তারা জেএসসি-২০২০ এর ফল প্রকাশ করেছেন। নতুন রোল নম্বর সৃজনের ক্ষেত্রে তারা এর (৩০ জানুয়ারির) আগের আবেদন বিবেচনায় নিয়েছেন। এখানেও বক্তব্যে গরমিল সুস্পষ্ট। তাছাড়া এ ঘটনায় নতুন করে পাসের তালিকায় যুক্ত হওয়া এক শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, অতি সমপ্রতি নতুন আবেদন ও ফি জমা দিয়ে তারা এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির আগে ওই শিক্ষার্থীর আবেদন ছিলনা। আর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফাইল ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যানের দফতরে যাওয়া দুজন শিক্ষক। এটি আজাদীর নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই জেলের খোঁজ নেই, উদ্ধার তিন
পরবর্তী নিবন্ধবাড়ি চট্টগ্রামে সেই নাহিদের খোঁজে ডিবি