পরীক্ষা শেষে বাবার সাথে দুপুরের ভাত খাওয়া হলো না সাতকানিয়ার তাসমিনের

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি | বুধবার , ৬ মার্চ, ২০২৪ at ৫:২৮ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিতে বসেছে মেয়ে।

আজ (৬ মার্চ) বুধবার সকালে সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ-প্রাণহরি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে তাসমিন আক্তার নামের মেয়েটি পরীক্ষা দিতে বসে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আহমদ হোসেন পেশায় একজন ভ্যানগাড়ি চালক।

তাঁর বাড়ি উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণতোয়া এলাকায়। তাসমিন আক্তার নামের মেয়েটি এবার উপজেলার বাজালিয়া শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

নিহতের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার বাবা গত মঙ্গলবার বিকালে ঘর থেকে বের হয়। রাতেই তিনি কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদারহাট এলাকার মো. শফি সওদাগরের আল-আকসা ফার্ণিচার নামক দোকান থেকে ভ্যান ভর্তি আসবাবপত্র নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

ওই ফার্নিচারগুলো ক্রেতার পছন্দ না হওয়ায় ভোরে একই মালামাল নিয়ে ভ্যান চালিয়ে ফিরছিলেন বাবা। পরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার ভেল্লা পাড়া ব্রীজের উপর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে হানিফ পরিবহনের একটি বাস ভ্যানগাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাবা সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।

এসময় তার (বাবা) সাথে থাকা অপর ভ্যানচালক রানা বাবাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আনোয়ার আরও বলেন, আমরা ৩ ভাই, ৩ বোন। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল পরীক্ষা শেষে তাসমিনকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু সে আশা তার পূরণ হয়নি।

এখন তিনি আমাদের এতিম করে চলে গেলেন পরপারে।

তাসমিন আক্তারের চাচা আবুল কাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আজ সকাল আনুমানিক সাতটার দিকে বড় ভাই আহমদ হোসেনের মৃত্যুর খবর পাই। এ সময় আমার এসএসসি পরীক্ষার্থী ভাতিজি পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার সাথে দুপুরের ভাত খাওয়ার কথা ছিল তাসমিনের।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহমদ বলেন, বিষয়টি জানার পর পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে সমবেদনা জানিয়েছি, অভয় ও সান্তনা দিয়েছি। পরীক্ষা কক্ষে যাতে ওই শিক্ষার্থীর কোন সমস্যা না হয় সেজন্য কক্ষ পরিদর্শককে খেয়াল রাখার জন্য বলেছি। তবে, সে পুরো সময়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।

শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তাসমিন এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি দাশ বলেন, সে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।আজ (বুধবার) তার পরীক্ষা ছিল ভূগোল। এ ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শোকাহত।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে পরিক্ষার হলে বসে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা কতটুকু কষ্টের সেটা ওই শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা হয়ত অনুভব করতে পারবেনা। আমি বিষয়টি জেনেছি আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি বাড়িতে আনার চেষ্টা চলছে বলে খবর পেয়েছি। আমি নিহতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি এবং ওই শিক্ষার্থীর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান, অর্ধলক্ষ টাকা অ’র্থদন্ড
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি আটক