নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র থেকে বিএনপিকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, দেশের রাজনীতি এখন চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে বিরত আছে। শুধু তাই নয়, তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি, অতীতের জ্বালাও পোড়াও আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতেও একই পন্থা অবলম্বনের অপচেষ্টায় আছে। চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ–নির্বাচন বানচালের আশঙ্কা আছে উল্লেখ করে বিএনপি–জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের প্রতি আহ্বান– যা করবেন নিয়ম মেনে করবেন। নির্বাচন বানচাল করার মতো কোনো ইচ্ছা থাকলে সেখান থেকে সরে আসবেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এসেছেন সামগ্রিক অবস্থা দেখতে। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তারা এখনো দেননি। বিদেশি প্রতিনিধিরা হয়ত তাদের প্রতিক্রিয়া দেবেন। তবে একটা কথা বলতে চাই, আমরা একটা স্বাধীন দেশ। এখন আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ে আছি। সেই লক্ষ্যও অর্জিত হবে।
গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে নাছির বলেন, প্রত্যেক সূচকে দেশ উন্নয়ন করেছে। অন্ধ ও বধির ছাড়া সবাই উন্নয়ন দেখছেন। এর সুবিধা বিএনপি নেতারাসহ সকলেই ভোগ করছে। বিরোধিতার কারণে তারা শুধু বিরোধিতা করছে। দেশের রাজনীতিতে নুরুল হক নুর ও হিরো আলমের ‘উত্থানের’ নেপথ্যে বিএনপির ‘হাত’ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হিরো আলম বা নুরের মত তথাকথিত নেতার উত্থান, তথাকথিতই বলব। এদের নেপথ্যে থেকে কারা সহযোগিতা করছে? বিএনপি এটা করছে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বলব, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে, কিন্তু হিরো আলমদের কারা নির্বাচনী মাঠে নামায়! এটা দুঃখজনক। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ঢাকা–১৭ আসনে গুলশান–বনানীর মত এলাকায় হিরো আলমের প্রার্থী হওয়া কি স্বাভাবিক?
বিএনপির সাথে জোটভুক্ত ৩৭টি দলকে অনুরোধ করবো, রাজনীতিকে রাজনীতিতেই রাখবেন। কোনো সহিংসতাকে যেন উস্কে দেওয়া না হয়। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এখন থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে থাকব। বিএনপি তাদের সুষ্ঠু যে কোনো কর্মসূচি পালন করুক তাতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হবে না। যদি তারা মানুষের জানমালের ক্ষতি করে জ্বালাও পোড়াও করে তাহলে তাদের সেই দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড আমরা প্রতিহত করবো। রাজপথে ধ্বংসাত্মক যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে।
চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর প্রস্ততির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আমরা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মন জয় করে কেন্দ্রে আনার জন্য আমরা কাজ করবো। নেতাকর্মীদের এই ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী দলের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থী হিসেবে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত দলের প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করা। তিনি বলেন, ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানাতে হবে। তাদের মন জয় করতে হবে। শুধু কেন্দ্রে কেন্দ্রে উৎসব করলে হবে না। ভোটার আনতে হবে।
এ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ৪২ বছর আগে আমি রাজনীতি শুরু করেছি। অতীতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা শুধু নয়, সকল ক্ষেত্রে মানুষের বঞ্চনা মেটাতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সংগ্রামে শামিল হয়েছি। এটাই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস। আমি নির্বাচিত হলে শুধু নৌকার বিজয় হবে তা নয়, সুশাসনেরও বিজয় হবে। নৌকার বিজয়কে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে ছিটমহল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাজী মো. হোসেন, যুব ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জোবাইরা নার্গিস খান প্রমুখ।