নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে

| বুধবার , ৩০ মার্চ, ২০২২ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ খাদ্য বলতে সাধারণত জীবাণু ও ক্ষতিকর পদার্থ মুক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিহীন খাদ্যকে বোঝায়। তবে খাদ্য নিরাপত্তা বলতে উৎপাদিত খাদ্য যাতে নিরাপদ হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা একটি কৌশলগত ব্যবস্থাপনা- যেখানে খাদ্যজনিত অসুস্থতা রোধ করতে নিরাপদ বা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ বা প্রস্তুতকরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে। খাদ্য বিভিন্নভাবে অনিরাপদ হতে পারে। উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত খাদ্য নানা পর্যায়ে দূষিত হয়। এর মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অসচেতনতাকে চিহ্নিত করেছেন। কৃষক বাজারজাত করার সময় খাদ্য দূষিত করতে পারে। বিক্রেতা ভালো পণ্যের সঙ্গে ভেজাল পণ্যে অথবা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মেশাতে পারে ফলে এসব খাবারে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে খাদ্যে ভেজালের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। গতকাল ২৯ মার্চ দৈনিক আজাদী এ বিষয়ে প্রধান শিরোনামে একটি খবর ছেপেছে। ‘ভেজাল খাদ্যে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। টেক্সটাইলের কাপড়ের রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, আইসক্রিম, মিষ্টি, পাউরুটি, বিস্কুট, দই, ললিপপ, চকোলেট এবং কেক। এমনকি শিশু খাদ্য গুঁড়ো দুধেও পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এসব খাবার খেয়ে কিডনি বিকল, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, দেশে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কোনো নজির নাই। ফলে তারা শুধু জরিমানার অঙ্ক গুণেই ফের একই কাজ করতে থাকে। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল বন্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালায়। নিয়মিত অভিযান না চালানোর কারণে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার সাথে জড়িত চক্রটি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি। মূলত এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব এর জন্য দায়ী। বিষাক্ত ও রং মিশ্রিত খাবার ডায়াবেটিস ছাড়াও কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সারের কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। লিভার ও কিডনি বিকলের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত খাবারই দায়ী।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক চাহিদা। এর মধ্যে খাদ্যই প্রধান। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্যই যদি অখাদ্যে রূপান্তরিত হয়, তা গ্রহণের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতে বাধ্য। এ খাদ্য যদি আমাদের জীবন-জীবিকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তবে আমরা যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির শিকার হবো তা কিন্তু যুদ্ধ ও মহামারীর ভয়াবহতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কাজেই কাল বিলম্ব না করে এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খাদ্য নিরাপত্তার উপর জোর তাগিদ দিয়ে দেশ যতই উন্নতি লাভ করুক না কেন তা টেকসই না হয়ে হবে আত্মঘাতী। জীবন ও খাদ্য দুটি একে অপরের পরিপূরক। মানুষ নিরাপদ খাদ্য পেলে তার ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
নিরাপদ খাদ্য সবার অধিকার হলেও বাস্তবে সেই অধিকার কতটুকু ভোগ করতে পারছে মানুষ, তা ভাববার বিষয়।
খাদ্যে বিষক্রিয়া দেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে এখন অনেকটা। ফলে জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের চেষ্টা বা আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবু রোধ করা যাচ্ছে না এ অবাধ অপতৎপরতা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় খাদ্যদ্রব্যে। রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অনিরাপদ করে ফেলছে খাদ্যকে। এসব খাবার খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খাদ্যকে স্বাভাবিক এবং ভেজাল ও দূষণমুক্ত সরবরাহ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। এজন্য শুধু আইন প্রণয়ন করলে হবে না, প্রয়োজন তার কার্যকর প্রয়োগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার : বাংলা শিশুসাহিত্যে রূপকথার জাদুকর